Thursday, February 1, 2018

লাল টিপ লাল শাড়ি


রাজীব নন্দী:
"জয়িতা কোথায়? মিথিলা কোথায়? ওদের জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। ওদের দেখতে ইচ্ছে করছে।"

       বইটা পড়া শেষে এভাবেই ইনবক্স করলাম লেখককে।

নাহ, রিভিউ লিখতে বসি নি। দু'চার কথা না বললেই নয়। তাই কিবোর্ডে হাত রাখা।

বইয়ের প্রথম পাতায় একটা প্যারা পড়েই চুল টানতে টানতে বলতে লাগলাম, আসলেই তো। কি সেই প্যারা যা কোট করে না দিলেই নয়!
                           “নিচু একটা জায়গায় পানি জমে আছে। হৃদয় সেই পানিতে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। সামান্য বাতাসে পানি নড়ছে, তার ছায়া ভেঙ্গে ভেঙ্গ যাচ্ছে। দুই-তিন-পাঁচ টুকরো হয়ে যাচ্ছে সে। এটাই একটা মানুষের প্রতিচ্ছবি। কোনো মানুষই তো একটা মানুষ নয়।”

উপন্যাসের নায়ক হৃদয়। যে জানে না তার জন্মপরিচয়। কেবল জানে মানুষের সেবার মাধ্যমে, মানুষে মানুষে ভালোবাসার চর্চায়, দেশপ্রেম বুকে ধারণ করে আমাদের পৃথিবীটা নিখাদ সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। তাই পরস্পরের ভালোবাসাটা পৃথিবীর জন্য বড্ড জরুরি। মানব প্রজাতি পানি ছাড়া হয়তো এক সপ্তাহ, খাবার ছাড়া দুই সপ্তাহ, ঘরবাড়ি ছাড়া হয়তো অনেক বছর বাঁচতে পারে কিন্তু নিঃসঙ্গতায় সে বাঁচতে পারে না। ধুঁকে ধুঁকে মরে কিংবা দিব্যি একটি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স হয় ঘুরে বেড়ায়।

মিথিলা। মাদকাসক্ত চরিত্র। আধুনিকতার নামে আজকাল আনেকে মাদককে যে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করে সেটাই লেখক চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। অবকাঠামোগত উন্নয়নইতো সব নয়। যদি দেশের যুব সমাজ এসব নেশায় জড়িয়ে নিজেদের শেষ করে ফেলে তাহলে অতসব উন্নয়ন কার জন্য? মূলত এই প্রশ্নই ছুড়ে দিয়েছেন পাঠকের দিকে।

এদেশে কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে হাওয়া হয়ে যাবে, দেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে কিংবা ঘুষের জোয়ারে ভেসে যাবে ফাইল সেসব মানুষ মেনে নেবে। কিন্তু প্রেমিকার হাত ধরে আপনি নদীর পাড়ে হাঁটতে গেলেন, কাশবনে ঘুরতে গেলেন, কিংবা এক বিকেল দুজনে ছাদে বেড়াতে গেলেন তখনই কিছু কিট এসে আপনাদের হেনস্তা করার চেষ্টা করবে। জয়িতারা সেরকম কিছু কিটের লোলুপ দৃষ্টির থাবায় পড়ে হারিয়ে যায়।

মিতু ভাবী। যাকে আমার ভালো লেগে যায় তার ভালোবাসার তীব্রতার জন্য। ভালোবাসি বলার চেয়ে ভালোবাসতে পারাটা, ভালোবাসতে শেখাটা আগে দরকার। এরকম একটা ভাবী থাকা খুব সৌভাগ্যের।

পূর্ণিমা। ফুলশিশু যে রাস্তায় ফুল বিক্রি করে। তাকে খুশি করতে হৃদয়ের চেষ্টার শেষ নেই। পূর্ণিমার মায়ের মৃত্যুতে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি এবং আমার মুখ থেকে বের হয়ে যায়, আহারে বেচারা। এটা না হলেও পারতো।

শেষে যে লাইনটা দিয়ে আমার লেখাটা শেষ করতে চাই তা হুবহু তুলে দিলাম।
                             “একজন চাষা যখন জমিতে ফসল ফলায় তখন সে মাটির সঙ্গে কথা কয়, বলদের সঙ্গে কথা কয়, লাঙ্গলের সঙ্গে কথা কয়, সাপজোঁকের সঙ্গে কথা কয়, নিজের কপালের সঙ্গে কথা কয় এমনকি সৃষ্টিকর্তার সঙ্গেও কথা কয়।" আর রাজনীতিবিদ নামের মুখোশধারী, তোমরা?

সর্বোপরি, এটা লেখকের দ্বিতীয় উপন্যাস। প্রথম উপন্যাস আমাকে এতোটা টেনে ধরতে পারে নি এটা যতটা পেরেছে। বইমেলা শুরু হল। এ মাস কাটুক বই পড়ে, বইয়ের পাতার ঘ্রাণ নিয়ে আর নতুন নতুন কালেকশনে। হ্যাপি রিডিং।

লাল টিপ লাল শাড়ি
লেখকঃ মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী
প্রকাশনীঃ ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ( প্যাভিলিয়ন-২)
দামঃ ১৫০ টাকা