
অনুচ্ছেদ (১-১৪)
........................................
১. এই সংবিধানের মূলমন্ত্র হইবে—আমার বিবাহ আমি করিব, যাহাকে খুশি তাহাকে করিব।
২. পাত্রীর পিতা সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বলা হইল—চাহিবামাত্র আপনার বিবাহযোগ্য মেয়েকে বিবাহ দিতে বাধ্য থাকিবেন।
৩. ‘সরকারি পাত্র ব্যতীত আমার কন্যা বিবাহ দিমু না, প্রয়োজনে ঘরের পিলার বানাইয়া রাখমু’—পাত্রীদের প্রতি পিতা সম্প্রদায়ের এরূপ ছেলেমানুষী কথাবার্তা বলা হইতে বিরত থাকিতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে, বেসরকারি পাত্রদেরও বাচ্চা হইয়া থাকে।
'
৪. একজন বেকার ছেলে বিবাহের কথা বলিলেই মুরব্বিরা সমস্বরে গাহিয়া ওঠেন, ‘বিয়া কইরা খাওয়াবি কী?’ বউ মানেই খাদক প্রাণি—এরকম উদ্ভট ধারণার পরিবর্তন করিবার নিমিত্তে অতি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে।
৫. বেকারদের জন্য ‘গণবিবাহতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ 'ম্যারেজ ব্যাংক' কিংবা 'ব্রাইডাল ব্যাংক' নামে ব্যাংক খুলিয়া সেইখান হইতে লোন লইয়া বিবাহ করিবার পথ সুগম করিবার পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।
৬. সভ্যতা টিকাইয়া রাখিবার মূল হাতিয়ার হইল জনগণ। তাই এই সংবিধান অনুযায়ী অন্যান্য মৌলিক চাহিদার মতো বিবাহকেও মৌলিক চাহিদা হিসেবে ঘোষণা করা হইলো।
৭. অনেক পুরুষ একটিমাত্র বিবাহ সম্পন্ন করিয়া দমিয়া যায়, ফুলদানিতে ভিজাইয়া রাখা ফুলের মতো নিস্তেজ হইয়া পড়ে। অতি শীঘ্রই এর সঠিক কারণ জানিয়া তাহা সংস্কার করিবার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।
৮. বিবাহের নামে মেকআপ বিজনেস, ফটোশ্যুট বিজনেস, সেলফি ডিজিজের মাত্রা দিনদিন বাড়িয়াই চলিতেছে। সময় থাকিতে এইসবের লাগাম টানিয়া ধরিতে হইবে।
৯. যৌতুকের নাম করিয়া দিনে-দুপুরে কোট-প্যান্ট পরিধান করিয়া সকলের চর্মচক্ষুর সম্মুখে ভদ্রবেশে ডাকাতি বন্ধ করিতে হইবে।
১০. বিবাহের রাতে মেয়েপক্ষের ঘাড়ে হাজার হাজার অতিথি সেবন করাইবার প্রথার নামে লুটপাট বন্ধে সুশীল সমাজের মুখের ঠুসি খুলিয়া এর বিরুদ্ধে কথা বলিতে হইবে।
১১. বিবাহের পর হনলুলু, পাতায়া কিংবা যেকোনো জায়গায় হানিমুন করিবার সম্পূর্ণ খরচ 'গণবিবাহতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার'কে বহন করিবে। তবে বাচ্চার দায়ভার পাত্র-পাত্রীই নিজেদেরই বহন করিবে।
১২. যেইদিন বাচ্চার ওয়া ওয়া ক্রন্দন ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত হইয়া উঠিবে, সেইদিন হইতে ওই দম্পতির 'গণবিবাহতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান' অনুসারে ‘নব-দম্পতি’ তকমা বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে।
১৩. বিবাহই জীবনের সব। জীবনে প্রচুর বিবাহ করিতে হইবে। তাই বিবাহ-পাগলা সমাজের জন্য এই স্বতন্ত্র ‘গণবিবাহতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধান’ ঘোষণা করা হইল।
১৪. পরিশেষে মনে রাখিতে হইবে, বিয়ে যতই হউক না কেন, সন্তান যেন একটির বেশি না হয়। কারণ বিবাহের দায়িত্ব গণবিবাহতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কিন্তু সন্তানের দায়িত্ব যার যার।
©রাজীব নন্দী
প্রকাশিত: ঠাট্টা | ইত্তেফাক
৬-০১-২০১৯ সংবিধান