Monday, May 13, 2019

প্রতীক্ষার অবসান

হ্যালো, কে বলছেন?

আমি মানুষ....

তা তো বুঝতেই পারছি। আমি তো বলি নি আপনি দাঁড়কাক কিংবা কোলাব্যাঙ।

কীসব বিচ্ছিরি কথাবার্তা....

কথার প্রারম্ভিকা এমন উল্টাপাল্টা হলে তো এসব শুনতেই হবে। পৃথিবী বদলায়, কতো গৃহবাসী হয় সন্ন্যাসী, কত ভেষজবিদ্যার সফল প্রয়োগ করেও ঝুলে যায় কপোলের আবরিত  আভরণ, তবুও পৃথিবীর কিছু কুনোব্যাঙের কোনো পরিবর্তন নেই। এরা একই সুরে ডেকে যায় আজীবন।

কোলাব্যাঙ থেকে এখন কুনোব্যাঙ হয়ে গেলাম?

তো কী? পুরনো খবরের কাগজের মতো ফেলে রাখা কাউকে এতোবছর পর তোমার মন খুঁজে পেলো কীভাবে? কোথায় লুকিয়ে ছিলে শুনি ?

যে মনের ভেতর ছটফট করে সবসময় তাকে খুঁজে পেতে হয় না।

এতো সাহিত্য বুলিয়ো না। ওসব সাহিত্যই আমার জীবনটা হাহাকারে ভরিয়ে দিয়েছে।  কবিতা গিলিয়ে গিলিয়ে আমাকে আজীবন দাসত্ব গ্রহণ করিয়েছো। আজ মনে হচ্ছে, সবই ভুল ছিল।

এক জীবনে এক বুক হাহাকার না  থাকলে সেটা জীবন নাকি? এতো বছরেও বুঝতে পারলে না তুমি... স্কেল মেপে সঠিকে নয়, ভুলই আমাদের বেঁচে থাকার তৃষ্ণা জোগায়।

তো আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য ফোন করেছো তো? দাও সান্ত্বনা.... গলা ভার করে বলো, নশ্বর পৃথিবীতে সবাইকেই চলে  যেতে হবে । কষ্ট পেয়ো না। ঈশ্বর যা করেন ভালোর জন্য করেন।

ঈশ্বর ছাড়া আমাদের শূন্য ঝুলিওয়ালাদের আর কেইবা আছে?

ঈশ্বর! আমাকে ঈশ্বরের কথা বোলো না।  যখন ঈশ্বরকে ডেকে ডেকে গলা শুকিয়েছি, নোনাজলে ডুবিয়েছি  জোড়া-চোখ, বালিশে চাপিয়েছি আর্তনাদ, ঈশ্বর তখন কোথায় ছিলেন? তাঁর জন্যই আমাকে দ্বিচারিণী হতে  হল।

আচ্ছা, সেসব পরে শুনবো। এখন তুমি কেমন আছ?

খুব ভালো। শীতের পাতাঝড়া  গাছের মতো, দমকা হাওয়ায় নিভন্ত প্রদীপের মতো ভালো আছি।

খুব ব্যস্ত ছিলাম বলে সেদিন আসতে পারি নি। এত বছর পরে তোমার দেখা পাবো, নোনাজলের পর্দা দিয়ে তোমার চোখে তাকানোর সাহস আমার নেই বলে আসা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি।

হুম, তুমি তো জ্বলন্ত অগ্নি নয়, পুড়ে যাওয়া ভস্ম দেখতে ভালোবাসো।

সেসব ছাড়ো, তোমাকে ও ভিটায় আর থাকতে হবে না। আমরা অন্য কোথাও চলে যাবো।

স্বামী মরে গেলে সে ভিটা বুঝি আর আমার ভিটা নয়? আর এত বছর পর বিধবার প্রতি দয়া দেখানোর দুঃসাহস তুমি কোথায় পেলে?

দ্বিচারিণী হয়ে সংসার গ্রহণ করে নিজেকে পুরোপুরি সমর্পণ করতে পেরেছো কখনো? শরীরের আর মনের ভেতর মহাকাশ সমান দূরত্ব নিয়ে তথাকথিত সংসার হয়, ভালোবাসা নয়।

এতোবছর পর তোমার ভালোবাসার কথা মনে পড়লো? নিজেকে একবারও ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করে না তোমার?

একজন ভবঘুরে মাতালের চেয়ে ভেবেছি ঐ সংসারী জীবনই তোমার সুখের হবে। তোমায় পাওয়াটাই আমার কাছে মূখ্য ছিল না  শৈলী, তোমার সুখে থাকাটাই ছিল আসল। আমি যতদিনে অন্যকিছু বুঝতে পারি ততদিনে তুমি সামাজিক কারাগারে বন্দি।

আমায় কখনো ডেকেছিলে ফেরার আমন্ত্রণে?

বুকের ভেতর দুঃখের ঝরনাধারা বইয়ে দিয়েও আমি তোমায় সূর্যের মতো হাস্যোজ্জ্বল দেখতে চেয়েছিলাম। আমি বুঝি নি, মৃত্যু উপত্যকায় সূর্যের ঐ হাসি কেবল উপহাস ছাড়া কিছু নয়।

তো ভবঘুরে মাতাল মহাশয় কি এখন মাতাল হয়ে আমাকে ফোন করেছে নাকি হৃদয়ের তীব্র ক্ষতের বেদনা ফোন তুলে দিয়েছে হাতে?

এখন সে ক্ষতে নুন ছিটিয়ে খুব সুখ পাও?

পড়ন্ত বয়সে ক্ষত ছাড়া হৃদয়ে আর কীইবা থাকে। স্মৃতিগুলোকে আজ বিশাল বিশাল দুঃখশালা মনে হয়।

স্মৃতি সবসময়ই হরেক রকম কষ্টের অবতারণা করে, হোক সে সুখের কিংবা দুঃখের। তুমি সেটাও ভুলে গেলে শৈলী?

আমি ভুলে গেলে ফোন রিসিভ করেই তোমার গলাটা কী করে চিনেছি বলো? নারীকে ভোলানো যায়, ভুলানো যায় না।

আজ রাখছি তাহলে। তোমার ঠিক করে রাখা ৯ই ফাল্গুনে দুজন নাহয় বাকি কথা বলবো।

কিন্তু তোমার সংসার? তোমার স্ত্রীকে কী বলবে?

অবিবাহিত পুরুষের স্ত্রী থাকে না। কারো জন্য জমিয়ে রাখা আবেগে আমি অন্য কাউকে ভাগ দিতে পারি নি। এটা আমার ব্যর্থতা হয়তো।

ব্যর্থ মানুষ, মাতাল মানুষ। আমায় পেয়ে তোমার কবিতা লেখায় আবার ভাটা পড়বে না তো?

পড়ুক না হয় ভাটা। যে সাগরে ভাটা নেই সে সাগর জোয়ার থেকে বঞ্চিত থেকে যায় আজীবন।

© রাজীব নন্দী

No comments:

Post a Comment