Thursday, December 29, 2016

জিপিএ ৪.৮৩

- হ্যালো, কি? 4.83? ওর ভাত বন্ধ দুপুর থেকে। ওরে বলে দেও যেন যেদিকে মন চায় বের হয়ে যায়। আমি আসতেছি..... অপদার্থ যতসব।

বলেই মাথা চুলকাতে চুলকাতে বসের রুমে গেলেন লিখন সাহেব। স্যার, আপনাকে সেদিন বলেছিলাম না যে আজ আমার আর্জেন্ট যেতে হতে পারে এক জায়গায়। আমার এখনি যেতে হবে।

আচ্ছা আচ্ছা। ঠিকাছে যান।

অফিস থেকে বের হয়ে একটা দোকানে । বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই ভেবে রেখেছিলেন এ দোকানে ঢুকবেন। তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে বাড়ির বাস ধরলেন।

ক্রিং ক্রিং......

দরজায় খুলতেই উচ্চস্বরে চেঁচামেচি। কই গাধাটা কই? ওকে ভাত দিয়েছ দুপুরে? বের হয় নাই এখনো?

কি হইছে? কোনদিন তো ছেলের পড়াশোনার ব্যাপারে নাক গলাতে শুনি নি। আজ এত হট কেন! আস্তে আস্তে বলতে লাগলেন মিসেস লিখন।

কি হইছে মানে! তুমি জানো না কি করছে ও। এখানে নিয়ে আসো তোমার গুনধর ছেলেকে। ওর গালটা আমার হাতের কাছে এনে দাও। অফিস থেকে চলে আসছি কি এমনি এমনি!

ছেলেকে সামনে এনে দাঁড় করালেন। মাথা নিচু হয়ে হাঁটু কাপা অবস্থা তার। জিপিএ ফাইভ পায় নি বলে তার বাবা এমন করবে ভাবতেও পারে নি সে। পড়াশোনা তো কম করে নি, তার কি দোষ!

কি খবর নেতা আপনার? মাথা নিচু কেন? মাথা উঁচু করেন।

মাথা তুলতেই ব্যাগ থেকে বের করে দিলেন সদ্য কেনা গিফটগুলো।

মুহূর্তেই থ হয়ে গেলেন মা ও ছেলে। কিছুই বুঝতে পারলেন না কি হল।

ছেলেকে বুকে টেনে নিলেন লিখন সাহেব। বাচ্চা তুই মাথা উঁচু করে থাকবি। অনেক ভালো রেজাল্ট করেছিস। আর বাবাকে কেউ ভয় পায় বোকা! আমি তো তোর বন্ধুর মতই। আসো আমরা একসাথে খাবো বলে তোমাকে খেতে দিতে না করেছি। ঐ তুমি কেমন মা, ছেলেটাকে একটু আদর করো না পাশ করার পরও।

তুমি যে কি আমি আজও চিনতে পারলাম না গো। গলায় বিস্ময় মেখে বললেন মিসেস।

হে হে এই লিখনকে চেনা এত সহজ না।

বাংলা একাডেমীর কাল্পনিক কথোপকথন

বাংলা একাডেমিঃ কি খবর রাজীব নন্দী কেমন আছেন?

আমিঃ মাশাল্লাহ, বহাল তবিয়তে আছি।

বাংএঃ তা তো থাকবেনই, প্রতিদিন ফডর ফডর কইরা দেহি তো স্ট্যাটাস মারেন, কোন সময় কিছু কই না। কেবল দেহি।

আমিঃ কি কইবেন আপ্নে?

বাংএঃ কোন সময় তো অনুমতি টনুমতি নেন নাই আমার কাছ থেকে, কিছু লেখার আগে আমার অনুমতি নিবেন। তারপর কলম হাতে নিবেন। লেখার প্লট সহী সালামতে নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ হইলে পোস্ট করার অনুমতি পাবেন।

আমিঃ লুইপা কাহ্নপা ভুসুকুপা যখন বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ লেখছে তখন কি আপনি অনুমতি দিছিলেন?

বাংএঃ সেইসব পুরানা কথা। তখনকা চিন্তার স্বাধীনতা ছিল না, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। আমরা এখন চিন্তার স্বাধীনতার নীতিমালা তৈরী করেছি, মত প্রকাশের সীমা ঠিক করে দিয়েছি। হে হে হে, বেশি বাড়াবাড়ি করলে স্বাধীনভাবে পুত কইরা দেই।

আমিঃ হে হে, মানুষ মরে গেলে পঁচে যায় আর একাডেমী আপ্নে তো দেখি জীবিত থাকতেই!

বাংএঃ এইসব স্ট্যাটাস ফিস্ট্যাট যে মারেন, লিমিট ক্রস কইরেন না। আমার বিরুদ্ধে কিছু লেখলে নিষিদ্ধ কইরা দিমু কইলাম।

আমিঃ ভাগ্যিস আপ্নে ফেসবুক আবিষ্কার করেনা নাই। তাইলে এতদিনে জনপ্রিয়তা তো দূরের কথা মাঠে মারা খাইতেন!

বাংএঃ এত ফডর ফডর কইরেন না। আমি প্রতিবছর বহু লেখক বানাই। আবার বহু লেখক খায়া দেই, ক্যান ইউ ইমাজিন!

আমিঃ মানুষ একাডেমী সৃষ্টি করে, একাডেমী মানুষ সৃষ্টি করে না। সো খেয়াল কইরা! পুত কইরা দিতে গিয়া নিজে পুত হইয়া যাইয়েন না।

#একটি কাল্পনিক কথোপকথন!
২৮-১২-২০১৬

Friday, December 23, 2016

রাষ্ট্র বনাম একজন রসরাজ


রসরাজঃ হে মহান রাষ্ট্র আমাকে চিনতে পারছ?
 
রাষ্ট্রঃ চেনার আগেই তো তোকে জেলে পুড়ে দিলাম ছোঁকড়া, তদন্ত করার আগেই রিমান্ডে দিয়ে দিলাম আর চেনার সময় পেলাম কই!

রসরাজঃ আমি সেই নাসিরনগরের হরিপুরের রসরাজ মোঃ রসরাজ কিংবা রসরাজ ইসলাম নই হরিনবেড়া গ্রামের রসরাজ দাস

রাষ্ট্রঃ রসরাজ মনে না থাকলেও তোর মালাউনি Ôদাস টাইটেল কি করে ভুলি রে বল তোকে আমি জেনেশুনেই বিষ পান করিয়েছি, বুঝস নাই ব্যাপারটা?

রসরাজঃ আমার অপরাধ কি ছিল হে প্রিয় মাতৃভুমি?

রাষ্ট্রঃ রাষ্ট্রের ইনার ট্রুথ আর আউটার ট্রুথকে তুই এক করে ভাবিস এটাই তোর অপরাধ শুধু তুই নয় তোর মত আরো বহু ডে ড্রিমার আছে তারাও জানে না ইনার ট্রুথ আর আউটার ট্রুথের পার্থক্য

রাসরাজঃ আমি পঞ্চম শ্রেনির পর পড়তে পারি নি বলে আজ তোমার এই ইংরেজি বুঝতে পারি নি মহান রাষ্ট্র
 
রাষ্ট্রঃ হা হা হা.. তা তো আগেই মালুম করেছি বৎস না হয় তোকে এভাবে পুরো জাতির সামনে উদোম করে  খেলিয়ে দিতে পারতুম বল!

রসরাজঃ অন্যায় না করেও আমায় যে শাস্তি দিলে তার জন্য কি জবাব দেবে?

রাষ্ট্রঃ জবাব? কার এত বড় স্পর্ধা আমার কাছে জবাব চাইবে!  পাওয়ার ইজ অলমাইট

রসরাজঃ সংবিধান, আইন সেসবের কি কোন মূল্য নেই?

রাষ্ট্রঃ রাস্তায় চাকার নিচে চাপা পড়ে কত নিরীহ পিঁপড়া পিষ্ট হয়ে থাকে তাতে গাড়ির কি আসে যায়

রসরাজঃ তোমার মাঝে আর সেই চাকার মাঝে পার্থক্য কি তবে?

রাষ্ট্রঃ ইয়ে মানে, কেউ কেউ আমাকে সেই চাকা বলেও জানে কেউ চাকার উপরে আয়েস করে যাবে আর কেউ তার নিচে পড়ে পিষ্ঠ হবে এটাই তো যেমন এবার তুই পিষ্ঠ হইলি

রসরাজঃ তবে কি তুমি মনে কর তোমার কোন অন্যায় নেই?

রাষ্ট্রঃ কেন মনে করব বোকা ছেলে চোর নিজেও জানে সে চোর, রেপিস্ট নিজের জানে যে সে অন্যায় করছে পৃথিবীর নির্মমতা তুই দেখেছিস এবার ভাব রাষ্ট্র কি জিনিস?

রসরাজঃ আমার মাতৃভুমির অধিকার কেন কেড়ে নেওয়া হল?

রাষ্ট্রঃ ভাবো ভাবো আরো ভাবো বৎস, ভাবার প্রাকটিস করো

রসরাজঃ রাষ্ট্র তুমি কি বেশ্যা? যখন যে পে করে তার কথা শোনো?

রাষ্ট্রঃ যদি ভাবো তাই আমি কেবল একটি শব্দ পিকচার টিউব বিহীন টিভির মত তোরা মানুষরা হইলি আমার পর্দা যে যা বলবে তাই পর্দায় তুলে ধরব সেটা পদাবলী হোক আর পাঠা বলি যাই হোক

রসরাজঃ প্রকৃত ফটোশপকারী জহুরুল ইসলামের বাড়িঘর কেন পুড়ল না, আমি দাস হয়ে জন্মে কি পাপ করেছি?

রাষ্ট্রঃ আমাকে এসব জিজ্ঞেস করিস না আমার পর্দায় এখন রাষ্ট্রধর্মের মহড়া চলছে তুই কখনো ক্ষমতায় আসিস তখন তোর কাছে বিক্রি হয়ে যাব আর জবাব দেব এবার আমায় ক্ষমা কর

রসরাজঃ তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাইতেছ?

রাষ্ট্রঃ যে রাষ্ট্র তোকে একটা আইনজীবী দিতে পারি নি, আদালতে তোর বক্তব্য পাত্তা দেওয়া তো পরের কথা শুনিই নি সে তোর কাছে ক্ষমা ছাড়া আর কিইবা চাইব

রসরাজঃ শুনলাম তুমি প্রগতিশীল হতে যাচ্ছ দিন দিন?

রসরাজ দাস
রাষ্ট্রঃ আর লজ্জা দিস না আমায় ক্ষমা কর আর বেঁচে থাক বেঁচে থাকাটা জরুরি