পি.এস.সি. ও জে.এস.সি পরীক্ষা পদ্ধতিতে আর কিছু হোক আর না হোক ছেলে মেয়েরা নকলটা ভালোই আয়ত্ব করতে পারছে।কি হবে এই পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে ? কোন চাকরি করতে পারবে কি এই সার্টিফিকেট দিয়ে? একমাত্র অর্জন এ প্লাস লেখা একটা কচুপাতা।
বাবা কাকাদের কাছে অনেক গল্প শুনতাম তাদের সময় ছেলেমেয়েরা নাকি বস্তা ভর্তি করে নকল নিয়ে যেত। তারপর আমাদের সময় মোটামুটি নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা হচ্ছে বলে চারদিকে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জয়ধ্বনি শোনা গেছে। সবাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে আওয়ামীলগের অন্যতম সফল মন্ত্রী হিসেবে অলিখিত ঘোষনা দিয়ে দিল।
কিন্তু সাম্প্রতিক ডিজিটাল পদ্বতিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস তার মুখে চুন ছাড়াই কালিমা মেখে দেয়। যে জিনিসটা সবাই জানে সেখানে আমাদের শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষা মন্ত্রী মহোদয় নাকি কোন অভিযোগই পায় নাই। তার ঘর চুরি হয়ে যাচ্ছে নিজে দেখেও না দেখার ভান করে চোখে কালো চশমা লাগিয়ে বসে আছে। যখন অন্য কেউ এসে বলবে যে মাননীয় মন্ত্রী সাহেব ও মন্ত্রী সাহেব আপনি কোথায়। প্রশ্ন ফাঁস করে তো তাস বানাইয়া ফেলতেছে। তখন তিনি আড়মোরা দিয়ে চোখ ডলতে ডলতে বলবেন ও তাই নাকি.. আচ্ছা আমি ব্যাপারটা দেখতেছি।
আমাদের ধর্মানুভুতিতে আঘাত হানলে লতিফ সিদ্দীকির ফাসিঁ দাবি করি ।জাতীয় দৈনিকে তার ফুঁসলে দেওয়া হেডলাইন হয় কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে জাতিকে যে ব্লাক হোলের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে সেটা কারো অনুভূতিতে লাগে না। লাগবেই বা কেন প্রশ্ন ফাঁস হলে তো ভালই ছোট ভাই বোন পরীক্ষা দিচ্ছে এ প্লাস পাবে। পরীক্ষায় পাশটাই বড় কথা শিক্ষাটা নয়। তাছাড়া আমাদের মিডিয়ার কাছে এসব খবরের চেয়ে ক্যাটরিনা কাইফের প্রেমিকের সাথে লং ড্রাইভে যাওয়ার খবরের গুরুত্বটা অধিক।
ফেসবুকে শত শত পেজ আছে যেমন পরীক্ষার গোষ্ঠি কিলাই, আমরাই প্রশ্ন ফাঁস করি( গর্বের সাথে বলে), ফাঁস হওয়া প্রকৃত প্রশ্ন ইত্যাদি ইত্যাদি যেখানে প্রতিদিন প্রশ্ন পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের কতৃপক্ষ তা দেখতেই পায় না। না পাওয়ারই কথা এখানে তো কারো ধর্মানুভূতিতে আঘাত করে নাই বিবেককে লাথি মেরেছে মাত্র।
জাফর ইকবাল স্যার এর আগে অনেক চিল্লাপাল্লা করেছেন একা একা অনশন করেছেন তবুও কারো নিউরনে প্রবেশ করে নাই। কী করলে বিষয়টা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ইগোতে লাগবে তাও অজানাই রয়ে গেল। পরীক্ষা হবে তার আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁস হবে এটা একটা চিরন্তন সত্য বাক্যে পরিণত হযেয়ে এখন। আমি টিউশনে যখন আমার ছাত্রকে বলি মন দিয়ে পড় তা না হলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হবে না আমার ছাত্রের উত্তর স্যার প্রশ্ন তো পাবোই পরীক্ষার আগের রাতে। আমি আর কিছু বলতে পারি না। হুম এটা তো সত্যি কথাই।
রাষ্ট্র সামান্য এই প্রশ্নের নিরাপত্তা দিতে পারে না সেখানে অন্য কিছু তো পরে আলোচনার বিষয়। ঘুষ খেয়ে সব অবিবেচক ও অশিক্ষিত লোকদের হাতে রাষ্ট্রের গুরু দায়িত্বের ভার তুলে দিলে এমনটা হওয়া কি স্বাভাবিক নয়?
কেহ আবার অভিভাবকদের কাঁধে দোষ চাপিয়ে দিয়ে বলছে তারা কেন এই প্রশ্ন বাচ্চা ছেলেদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আরে ভাই এই প্রতিযোগীতার বাজারে আপনার পাশের রুমে যখন কেউ সামনে প্রশ্ন নিয়া পড়তে বসে আপনি কি পারবেন ধোঁয়া তুলসী পাতা হয়ে বসে থাকতে। বুদ্ধিমান অবিভাবক মানেই সুযোগ নিবে কিন্তু অন্যভাবে।আর ধোঁয়া তুলসী পাতা তখনই সম্ভব যখন রাষ্ট্র আপনার সেই মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারবে। তার আগে নয়। গানের সুরে বলতে ইচ্ছে করছে এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি ফটোকপি আর ফেসবুকেতে প্রশ্ন পত্রের ভূমি।
আর প্রশ্ন পত্রের ফাঁস যদি একান্ত রোধ করা না যায় তবে আমি দুটি আইডিয়া দিতে পারি।
এক. পরীক্ষার প্রতিটা বেঞ্চে দুই জন করে বসবে। একপাশে যে প্রশ্ন পেয়েছে সে বসবে আর অন্য পাশে যে হতভাগা ফেসবুকের যুগে এসেও প্রশ্ন পায় নাই সে বসবে। শিক্ষকরা প্রশ্ন ও খাতা দিয়েই লাইব্রেরীতে গিয়ে ঘুমাবে আবার দুই ঘন্টা পর এসে খাতা নিয়ে যাবে। স্বাধীনদেশে স্বাধীনভাবে পরীক্ষা দেবো যেমন ইচ্ছা তেমন পরীক্ষা দেব তাতে কার কি যায় আসে।
দুই. আর যদি তা না হয় তাহলে শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করে এই লোক দেখানো পরীক্ষা পদ্ধতিটাই বাদ করে দিন। সাহায্য নিতে পারেন আবুল মনসুর আহমদের “গালিভরের সফরনামা” থেকে। যেখানে শিক্ষাসংস্কার অংশে দেখা যায় শিক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করে পড়ালেখা থেকে লেখার পদ্ধতি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে । পাকিস্তান শাসনামলের কহিনীর আলোকে, তাদের ভাষ্য মতে, কোরআন হাদীসে তো সকল কিছু দেওয়াই আছে সুতরাং নতুন করে তো আর হাদীস লেখার দরকার নাই তাই লেখা পদ্ধতির কোন দরকার নাই । সব হবে পড়া । তাতে প্রশ্ন ফাঁসের ভয় নাই আর কলম কেনার টাকাও বেঁচে যাবে।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করছি এখনো কিছু করুন । প্রকৃত অপরাধীদের ধরে শাস্তি দিয়ে বহিষ্কার করুন আর জাতিকে এই লজ্জার হাত থেকে বাঁচান। আবার যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর স্যার আপনাকে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে।
রাজীব নন্দী
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
No comments:
Post a Comment