Tuesday, July 24, 2018

একটা জীবন নাহয় কেটে যাক তীব্র হাহাকারে

প্রিয় শ্রাবণ,
তুমি কি মনে মনে আমার সাথে হুট করে দেখা হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকো? কলেজের রিসেপশন দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে কি কখনো মনে হয় না তোমাকে এক পলক দেখার জন্য আমি ভোর সাতটায় গিয়ে ওখানটায় বসে ছিলাম? নাকি আমার উপস্থিতি তোমায় বড্ড বিরক্তর জন্ম দেয়। বিরক্ত হতে হতে এতোদিনে তোমার বিরক্তির উপরও মায়া হওয়ার কথা।

যাক সে সেসব কথা।  শ্রাবণ মাসে একটা শ্রাবণপত্র না লিখলে ঠিক যেন হচ্ছে না তাই অনেকদিন পর তোমায় লিখতে বসলাম। এটা তোমায় লেখা আমার এগার নম্বর পত্র। জানি আগের একটিও তুমি পড়ো নি। আমার লেখা তোমার পড়াটা জরুরিও নয়। এ তল্লাটে তুমি পা না ফেলার যে ব্রত গ্রহণ করেছো সেটা অটুট রাখো তোমার অহমিকার মতোই। তোমার ইগোর প্রাচীরে যেন বিন্দুমাত্রও ফাটল না ধরে সেদিকে কড়া নজর রেখো। দেয়ালের ওপারে কি ঘটলো সেসব তোমার কখনোই জানার বিশেষ প্রয়োজন নেই।

আমার দ্বিতীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলে। বারো তারিখ পরীক্ষার পর আবার পনের তারিখ পরীক্ষা ছিল। মাঝের এই দু-দিন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ হেয়ালিপনা বোধহয় করেছি আমি। নিজেকে একটিবারও জিজ্ঞেস করি নি আমি ভুল সঠিক  কিছু করছি কিনা। আমার মন বলছে যাও অামি ছুটে গিয়েছি সেথায়। মন নামক ইঞ্জিনের সাথে শরীর নামক বগিটা লাগিয়ে দিয়েছি মাত্র। আমি জানি এসবের বিন্দুসম গুরুত্বও তোমার কাছে নেই। বারো ঘন্টা পাড়ি দিয়ে তোমায় তিন ঝলক দেখতে পেরেছি এটাই সান্ত্বনা।

আমাদের যে দিন গেছে তা কি একেবারেই গেছে? নাকি কিছু আছে অবশিষ্ট। কথার নিগরে বানানো কথামালা কি একেবারেই মূল্যহীন হয়ে গেছে? ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে গোলাপ কিনে আনে সে তো বেলাশেষে শুকিয়ে পড়ে থাকে ধুলোয়। আমিও কি তেমন একটা গোলাপ ছিলাম?  ভায়োলিনের সুমধুর সুর কেবল সংগীতের বাহবাই পায় ওটা যে তার করুণ আর্তনাদ সেকথা সবাই বেমালুম ভুলে যায়। আমি কি সুরের ছদ্মনামে সে আর্তনাদ ছিলাম?

যাক গে সেসব কথা। কালো ড্রেস পরে সামনের সিঁড়িতে তোমায় বসা দেখে আমার কলিজা ছিঁড়ে যেতে বসেছিল। নিজের কপালকে কেবল অভিসম্পাত দিতে লাগলাম, ভেতরটা যার জন্য ছিঁড়ে যাচ্ছে করুণ আর্তনাদে সে দেবি স্বয়ং আমার সামনে বসা অথচ তিনি আমার নয়। নোনা জলের চিহ্নে যার জন্য বালিশে লেগে আছে, সে আমার নয়। যাকে একবার দেখার জন্য আমি সাতবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে পারি, সে আমার নয়। যাকে চিৎকার করে ভালোবাসি বলতে বলতে নিজের ভোকাল কর্ডের উপর অত্যাচার করতে পারি, সে আমার নয়। যে কখনো ভালোবাসে নি তাকে এই অনুভূতি কখনোই বুঝানো যাবে না। কোনো গল্প সিনেমা দেখিয়েও শেখানো যাবে না। এটা ঠিক অন্য জগতের একটা অনুভূতি। আমি যতবারই ভাবি সে আমার নয় আমার ভেতরে ভেতরে যেন ততবারই আমি মরে যাচ্ছি, দুমড়ে মুচড়ে যেন নিমিষেই ভেঙ্গে পড়ি আমি। আবার দাঁড়াই। শেষ করে দেয়া মানে তো ভালোবাসা নয়।

শ্রাবণ, আমাকে কখনো ভালোবাসতে হবে না। আমি চাই তুমি শুধু এটুকু বুঝো যে কেউ একজন উম্মাদ হয়ে যায় তোমার কথা ভেবে। তুমি শুধু জানো কেউ একজন সত্যি সত্যি তোমাকে ফিল করে, তোমায় ভেবে ভেবে কারো শরীরে প্রচণ্ড গরমেও কনকনে শীতের কাঁপুনি দেয়। তুমি নিজেকে লুকিয়ে রাখো, আড়াল করে রাখো আজীবনের জন্য কিন্তু আমায় কেবল এই মানসিক শান্তিটা দাও যে তুমি জানো কেউ একজন তোমায় ভালোবাসে। তার ভালোবাসাটাকে তুমি গ্রহণ করতে না পারো অসম্মান করো না। তাকে ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা তুমি রাখো কিন্তু তাকে অপমান করার ক্ষমতাটা তুমি হারিয়ে ফেল ভালোবাসার দোহাইয়ে এটাই চাই।

একটা জীবন না হয়  কেটে যাকতীব্র হাহাকারে। না পাওয়ার আর্তনাদ ছটফট করুক আমার ভেতর। অনুভূতি ফ্রেমবন্দি করার সিস্টেম থাকলে আমি আমার এই অনুভূতিটা বন্দি করে রাখতাম। আমি ভয়ে তোমার কাছে যাই না তোমার কোনো কটু কথায় যদি আমার এই ডিভাইন অনুভূতিতে ক্ষয় ধরে আমি কি সেটা পুনরুদ্ধার করতে পারবো কি?  বৃদ্ধ বয়সে হাতে লাঠি নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখনি আমার মহারাণীর কথা মনে পড়ে চোখের কোনে অশ্রধারা বইবে সেটাই হবে আমার ভালোবাসার জয়। আমি বুঝবো ভালোবাসা মানে পাশাপাশি থাকাই নয়, পাশাপাশি অনুভব করার সক্ষমতা।

যাক। লিখতে থাকলে একটা উপন্যাস হয়ে যাবে। ভালো থেকো। নববধূর শাড়ির ভাঁজের মতো, তোমার কপালের কালো টিপের মতো, তোমার যত্ন করে আগলে রাখা ইগোর মতো। এতক্ষণ শুধু  একাই বকে গেলাম। তোমার সম্পর্কে কিছু জানতেই চাই নি। কখনোই ফের উত্তর আসবে না জাতি তবুও জানতে ইচ্ছে হয়।  এখন তুমি কেমন আছ শ্রাবণ?

- কেউ একজন
২৪-০৭-২০১৮

2 comments:

  1. অসাধারণের থেকেও বেশি কিছু,,,,,,,

    ReplyDelete
  2. অসাধারণ দাদা অঅঅসাধাণ

    ReplyDelete