
জীবনে প্রথম ট্রেকিং ছিলো। আগের রাতে পিৎজাহাট থেকে এসে আর রাতে খাওয়া হয় নি। সকালের নাস্তা বলতে চা সিঙ্গারা। উঠার সময় একটা ঝরনায় মাথা ভিজিয়ে নিলাম। আধাঘন্টা পাহাড় ভাঙার পর মস্তিষ্ক সিগনাল দেয় ভেতরে মাল নাই কোথা থেকে সাপ্লাই দেবো! আমি পানি পান করতে করতে বললাম, মানসিক শক্তি বলেও একটা শক্তি আছে মস্তিষ্ক সেটাকে তুমি উপেক্ষা করতে পারো না! ঘামের মিছিল বাড়তেছে ক্রমান্বয়ে। শিব মন্দিরে গিয়ে সেবায়েতের ব্যবহারে কলিজা শীতল হয়ে গেলো। এতো উপরে কষ্ট করে জলের বোতল ভরে রেখেছে, ভাবলাম খিচ দিয়া টাকা নিবে। সে উল্টো বলে, এখানে যা আছে সবই তোমাদের বাবা, আমার কিছু নেই। আহা শান্তি! চন্দ্রনাথের কাছাকাছি এসে ভাগ্যিস একটা দোকান ছিলো। সেখান থেকে আবার পানি, প্রাণ frooto খেয়ে অনেকসময় রেস্ট নিলাম। চন্দ্রনাথ মন্দিরে যাওয়া হয় নি। বাম দিকে কালী মন্দিরের খোঁজে প্লাবন দার সাথে আমরা আরো দশজন হাঁটা শুরু।
এবারের পথগুলো আরো সরু এবং কখনো নাইন্টি ডিগ্রিতে দাঁড়ানো। দশ টাকার বাঁশের লাঠি যে উপকার করলো তা টাকায় হিসেব হয় না। পুরনো ট্রাকাররা বিভিন্ন খুনের, ছিনতাইয়ের ইতিহাস তুলে মনে ভয়ের সঞ্চার করতে লাগলো। পুরো পাহাড়ে আমরা এগারজন। নিচে তাকালে ধু ধু গাছপালা। হঠাৎ মনে হলো আমরা যেখানে যেতে চাইছি সে পথ হারিয়ে অন্য পথে ঢুকে গেছি। ট্রাকিং গুরু প্লাবন দাকে জিজ্ঞেস করলাম দাদা আর কতোদূর। উত্তর আসলো, "জানি না দাদা। " আসল রোমাঞ্চ তো কেবল শুরু। হাঁটছি পাহাড়ের বুকে অথচ জানি না কোথায় যাচ্ছি এরচেয়ে আর রোমাঞ্চকর ব্যাপার কি হতে পারে।
এবার হাঁটার পথ ক্রমান্বয়ে নিচের দিকে। উপরে উঠার পথ খুব একটা নেই। তাই এবার ক্লান্তিহীন। মধ্যিপথে আমলকী গাছে হামলা দিলো কয়েকজন। একেবারে সতেজ প্রাকৃতিক আমলকী। মাঝে মাঝো কোন শব্দ শুনলে মনে হয় এই বুঝি ছিনতাইকারী পিস্তল নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো! হাঁটতে হাঁটতে পথ শেষ! এখন পানির পথ। টেনশনে পড়ে গেলাম আবার যদি পেছনে ফেরতে হয় একই পথে তবে আমার পক্ষে আজ ঘরে ফেরা সম্ভব নয়।
বেয়ার গ্রেলস বলেছেন, পাহাড়ে যদি কোন পথ খুঁজে না পাও তাহলে পানির পথ ধরে হাঁটতে থাকবে সেটা তোমাকে একটা গন্তব্যে নিয়ে ঠিকই পৌঁছাবে। বেয়ার মামার কথামতো সবাই পানি পথে হাঁটতে লাগলাম। আমার ভালোই লাগে এখন হাঁটতে। মাঝে মাঝে সেল্ফি খিচি রাসেল আর নেপালিস সুমিত সিং সহ। হাঁটতে হাঁটতে যেখানে পৌছাইলাম সেটা ছিল অবাক করার মত ঘটনা। আমরা যেখান থেকে ট্রেকিং শুরু করছি তার ঠিক বাম পাশে দিয়ে এসে উঠলাম। পিছনে ফেরে তাকিয়ে দেখলাম এতো বিশাল পাহাড় আমি পাড়ি দিয়ে আসলাম কীভাবে হে ঈশ্বর!
ভিডিও দেখুন (সীতাকুন্ড)
------
২৭ অক্টোবর ২০১৬
No comments:
Post a Comment