 |
ডিম পাহাড়ে একটি মাচাংয়ে আমরা |
চট্রগ্রামে ইন্টার্ণশীপে আসার প্রথম কারণ ছিল ঘোর্ঘাুরি করা। সে হাওয়ায় পাল দিয়ে দিলেন প্লাবন পাল দাদা। প্রথম ট্রেকিং সীতাকুন্ডের পর দ্বিতীয় ট্রেকিং করে আসলাম বান্দরবান থেকে। উদ্দেশ্য ডিম পাহাড় এবং হাসিক আলীর সুরঙ্গ। বৃহস্পতিবার রাত আটটার বাসে চট্রগ্রাম নুতন ব্রীজ থেকে কক্সেসবাজারের চকরিয়ায় যখন পৌছলাম রাত প্রায় সাড়ে এগারটা। চকরিয়া প্লাবন দা’র কলিগের চার তালা ছাদের উপর রুমে রাত কাটিয়ে দিলাম আমরা আট জনের টিম। ভোর না হতেই কানে আসল এলার্ম। না ঘড়ির এলার্ম নয় ট্রেকিং টিমের এলার্ম। ব্যাচেরের সঙ্গী ঐ বিছানা ছেড়ে কেইবা এত ভোরে উঠতে চায় তবুও যে উঠতে হল। ভোরে ভোরে বের হয়ে পড়লাম চকরিয়া থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। প্রথমে চকরিয়া থেকে আলী কদম বাস ষ্ট্যান্ড নেমে নাস্তা করলাম। তারপর সেখান থেকে জিপে করে ডিম পাহাড়ের সান্নিধ্যে যাত্রা শুরু। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল তিন হাজার টাকা দিয়ে জিপ ভাড়া করে আট জনই জিপের ছাদে উঠে পড়লাম। আশী কদম থেকে থানচির দুরত্ব প্রায় ৩০ কিমি। আমরা তারও ৭ কিমি আগে ডিম পাহাড়ে নেমে যাই। মানে আমাদের পাহাড়ে যেতে হয়েছে মোট ২৩ কিমি। শ্বাস প্রশ্বাস ক্রমেই ভারী হয়ে আসতেছে জিপকে কেবল উপরের দিকেই উঠতেছে দেখে। কখনও বিশ কখনও ত্রিশ কখনও চল্লিশ কিংবা তারও বেশি ডিগ্রি বাঁকা রাস্তা ধরে জিপ উপরের দিকে যাচ্ছে। সাপের মত আঁকাবাকা পথ আর উচু নিচু তো আছেই। কখনও পথের দু’দিকেই খাদ। বাস পথ হারালেই প্যারাসুট ছাড়া শূন্যে ভাসতে হবে সবাইকে। এ ভ্রমন বর্ণনাতীত। নিজে উপভোগ না করলে বলে কিংবা লিখে বুঝানো অসপসিবল।
 |
মাচাং |
পুরো জায়গাটাতেই সেনাবহিনীর টহল। পাহাড়ে ঢুকতেই থিংকু পাড়া আর্মি ক্যাম্প থেকে পারমিশন নিতে হয়। তাই কিছু সময়ের জন্য জিপের সিটগুলো আমাদের ছোঁয়া পেল। সবশেষে জিপের ঘূর্ণন থেমে যেতেই আমাদের পাহাড় ট্রেকিং শুরু ডিম পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। উঁচু নিচু পাহাড় ভেঙ্গে একটা মাচাং এর মত ঘর পাওয়া গেল। সেটাতে বসে কলা, মোজো, বিস্কিট, পানি ও লাপা(!) দিয়ে হালকা নাস্তা শেষ করলাম। কিছু সময় ফটোসেশন করে দ্বিতীয় দফায় পাহাড়ের বুকে হামলা দিয়ে পৌছে গেলাম ডিম পাহাড়। না কোন ডিম নেই এ পাহাড়ে তবুও কেন এ নাম তা অনন্ত জলিলও গুগোল এবং ভূগোল খুঁজে বের করতে পারে নাই। আমাদের ধারণা এখানে খুব কম সংখ্যক লোকেরই পদচারনা পড়েছে। তারপর প্রায় তিনটা নাগাদ আমরা আবার আলী কদম বাস ষ্ট্যান্ডে এসে পৌছলাম। না এ পাহাড়েরর কোন দুঃখ নেই বোধহয় নচেৎ কোন ঝরনা খুঁজে পেলাম না কেন? তবে দুঃখ আছে পাহাড়িদের বুকে। সমুদ্র পৃষ্ঠা থেকে প্রায়
২৫০০ ফুট উপরে বসত বাড়ি বানিয়ে বসবাস করে মানুষ।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু রাস্তা। কোন আধুনিকতার ছোঁয়া নেই সেখানে। নেই শিক্ষার ছোঁয়াও। আমাদের ডিম পাহাড়ের গাইড ছিল আনোয়ার । অল্প বয়সে তার কথাবার্তায় কত বাস্তবতার নির্মমতা টের পেয়েছি আমি। অতো উঁচুতে বসবাস করেও জীবনযাত্রার মান নিম্নই রয়ে যায় পাহাড়িদের। পরের পোস্টে শুনাবো লাইফের সেরা এডভেঞ্চার আলীর গুগার কাহিনী। অপেক্ষায় থাকুন।
 |
ডিম পাহাড়ে আমরা | | | | | | | |
|
No comments:
Post a Comment