Wednesday, November 23, 2016

সিনেমাটোগ্রাফি, নাটকের স্ক্রিপ্ট যেভাবে লিখবেন

কিভাবে আপনার প্রথম চলচ্চিত্রটি বানাবেন ? (টিউটোরিয়াল )
পর্ব - ০১
কৈফিয়ত
আপনার মধ্যে স্বপ্ন আছে। স্বপ্ন একটি চলচ্চিত্র বানানোর। স্বপ্ন একজন চলচ্চিত্রকার হওয়ার। কিন্তু জানেন না কিভাবে বানাতে হয় একটি চলচ্চিত্র। আপনার জন্য এই বই।
চলচ্চিত্র বানানোর স্বপ্ন দেখেন বলেই ধরে নেয়া যায় আপনি সৃজনশীল। আপনি একটি জানা ঘটনাকে গুছিয়ে লিখতে পারেন। আপনি একটি ঘটনাকে কল্পনার রং চড়িয়ে আরও আকর্ষণীয় করতে পারেন। কিন্তু সেগুলো কেবল কাগজ ও কলমে। সেই গল্পটিকে চলচ্চিত্রে রূপ দেয়ার জন্য আপনার জানা চাই কিছু কলা-কৌশল। সেই কলা-কৌশলগুলিই এই বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে।
আপনি শিখবেন কিভাবে সৃজনশীল চিন্তা করতে হয়, কিভাবে চিন্তাকে গল্পে রূপান্তর করতে হয়, কিভাবে গল্পকে চলচ্চিত্র মাধ্যমের উপযোগী করতে হয়। আরও শিখবেন, কিভাবে গল্পকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছবি ও শব্দে বেঁধে ফেলবেন। ক্যামেরার ভাষায় আপনার গল্পটিকে কিভাবে জীবন্ত করে তুলবেন এবং ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবিগুলোকে সাজিয়ে গুছিয়ে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করবেন। জানবেন, চলচ্চিত্র বানাতে হলে কাদের সহায়তা আপনাকে নিতে হবে, কাদের সঙ্গে আপনি মিলে মিশে কাজ করবেন এবং তাদের কাছ থেকে কিভাবে কাজ বের করে আনবেন।
কেবল স্বপ্ন আর এই বইটি পুঁজি করে আপনি বানিয়ে ফেলতে পারবেন আপনার প্রথম চলচ্চিত্রটি। চলচ্চিত্রকার হওয়ার পথের প্রথম পদক্ষেপ নিচ্ছেন আপনি। স্বপ্নিল এ পথের যাত্রা শুভ হোক।
আপনার প্রথম পদক্ষেপ : চাই একটি গল্প
চলচ্চিত্র বানাবেন কেন ? কারণ আপনি একটি গল্পকে দর্শককে দেখাতে ও শোনাতে চান। চলচ্চিত্রের ভাষায় গল্পের ছলে আপনার নিজস্ব কিছু ধ্যান-ধারণা দর্শককে জানাতে চান। দর্শককে বিনোদন দিতে চান।
কিভাবে বানাবেন আপনার গল্পটি ? গল্পটির একটি শুরু থাকবে, মধ্য থাকবে এবং শেষ থাকবে। আর গল্পটির মধ্যে থাকবে একটি দ্বন্দ্ব। কোন একজন ব্যক্তির গল্প হবে এটি। সে কিছু অর্জন করতে চায়। সেই চাওয়াটা বিশাল কোন চাওয়া থেকে সামান্য কিছু হতে পারে। সে চায় মন থেকে। সে পিছ পা হওয়া জানে না। সে একটা পণ করেছে। কিন্তু তার সেই অর্জনের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। কেননা, তার এই অর্জনের পথে রয়েছে এক বা একাধিক বাধা। সেই বাধার মধ্যে কিছু তার নিজের মধ্যে বা অন্য কোন ব্যক্তি তার পথের কাঁটা। সুতরাং একটি সংঘাত অনিবার্য। চলচ্চিত্রের শুরু থেকেই প্রতি পদে পদে সংঘাত হবে। সেই সংঘাতে ব্যক্তিটি বিজয় লাভ করবে বা হেরে যাবে।
সহজ কথায় পৃথিবীর তাবৎ সিনেমার গল্প এটি। এর বাইরেও সিনেমা হয়। নানা রকম সিনেমা হয়। এত রকম হয় যে, এক কথায় সেটা বলা সম্ভব নয়।
কিন্তু আমরা এত জটিলতায় যাব না। কেননা, আমরা মাত্র শেখা শুরু করেছি। আমরা সহজ করে শিখব। যত সহজ করে সম্ভব তত সহজ করেই আয়ত্ত করব চলচ্চিত্র বিদ্যা। এই বিদ্যা আয়ত্ত করার জন্যই পণ করেছি জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র বানাব ।
আসুন, কাজে নেমে পড়া যাক।
পর্ব - ০২
প্রথম কাজ : সৃজনশীল ভাবনা গল্পের তরে
ভাবনা হবে সৃজনশীল। মানে সৃজন করার জন্য। সৃজন করতে হলে ভাবতে হবে। সেই ভাবনা এলোমেলো হলে হবে না। হতে হবে গুছানো। হতে হবে পরিকল্পিত। হবে হবে সেই মাধ্যমের উপযোগী যেই মাধ্যমে সৃজনশীল কাজটি হবে।
আপনি চলচ্চিত্র বানাবেন। তার জন্য গল্প লিখবেন। সেই গল্প হতে হবে চলচ্চিত্রের উপযোগী। নচেৎ সেই গল্পের কোন মূল্য নাই।
চলচ্চিত্রের গল্প কেমন হয় ? চলচ্চিত্রে আমরা কতগুলো চলমান দৃশ্য দেখি। আর শুনি কিছু শব্দ। তাই গল্পের মধ্যে থাকতে হবে কিছু দৃশ্য বা ছবি এবং কিছু শব্দ। যেই গল্পই বানান না কেন সেটাকে দৃশ্যে এবং শব্দে প্রকাশ হবে।
কিভাবে বানাবেন চলচ্চিত্রের গল্প ?
পৃথিবীর সব গল্প বানানোর একটা সহজ নিয়ম আছে।
এই সহজ নিয়মের জন্য দরকার মগজের ঝড়। ইংরেজিতে যেটাকে বলে ব্রেইন স্টর্মিং - সেটার সোজা বাংলা মগজের ঝড় বলাই ভালো।
যাই হোক, মগজের ঝড় কিভাবে তুলবেন এবং সেটাকে কিভাবে আপনার গল্প বানাতে ব্যবহার করবেন সেটাই হল আলোচ্য বিষয়। এই মগজের ঝড় তোলার নানা কায়দা আছে। অত বিস্তারিত আলোচনায় না গিয়ে আমরা সহজ করে বুঝি।
প্রথমে ভাবুন একটা মূল বক্তব্য নিয়ে। কী বলতে চান আপনি এই চলচ্চিত্রের দিয়ে ? যেমন, আপনি বলতে পারেন :
০১) মানুষ মানুষের জন্য।
এই সহজ কথাটি বোঝানোর জন্য আপনি একটি গল্প তৈরি করতে পারেন । সেই গল্পে কোন মানুষ নিঃস্বার্থভাবে অন্য মানুষের জন্য জীবন বিলিয়ে দেবে। অপর জন তার এই বিলিয়ে দেয়ার কথা প্রথমে জানবে না। যখন জানবে তখন আর প্রতিদান দেয়ার সময় নাই।
অথবা
০২) প্রেম নয়, টাকাই বড়।
একটি প্রেমের গল্প। গল্পের শেষে দেখা গেল কেবল টাকার জন্য নায়ক / নায়িকা অপর জনকে ছেড়ে গেল। অপরজন তার এই দুঃখে তার জীবন বিসর্জন দিল ।
অথবা
০৩) টাকা নয়, প্রেমই বড়।
এইটিও একটি প্রেমের গল্প। এই গল্পে গল্পের নায়ক টাকার মোহ ছেড়ে তার প্রেমাস্পদকেই বড় করে দেখবে। টাকা বা সম্পদের হাতছানি এড়িয়ে সে তার প্রেমের জন্য একের পর এক ত্যাগ করতে লাগল। কিন্তু তার এই প্রেমের মূল্য দিতে গিয়ে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হল।
আরেকটা কথা, গল্পের এই মূল বক্তব্যটা গোপন রাখতে হবে। কোথাও প্রকাশ্যে বলা যাবে না। যত গোপন রাখা যাবে, যত কৌশলী হওয়া যাবে, ততই গল্পটা শৈল্পিক হয়ে উঠবে । কিন্তু সে জন্য গল্পটি জটিল করা যাবে না, গল্পটি হবে সহজবোধ্য, যুক্তিসঙ্গত, অদ্বিতীয় ও স্বাভাবিক সম্ভাব্য ঘটনায় ভরপুর। এমন কোন ঘটনা থাকবে না, যেটা খাপ খায় না, অস্বাভাবিক লাগে। তেমন কোন ঘটনা জুড়ে দেয়ার লোভ দমন করতে হবে, আবেগ সংযত করে সেই অংশটুকু নিষ্ঠুরের মতো বাদ দিয়ে দিতে হবে।
এবার মগজের ঝড় বিষয়টা বোঝার জন্য একটা অনুশীলনী করা যাক।
অনুশীলনী :
০১) এক টুকরো সাদা কাগজ ও কলম নিন।
০২) একটি শব্দে একটি বিষয় বেছে নিন। শব্দটি কাগজের মাঝখানে লিখুন। মনে করুন, এটি একটি বীজ। এই বীজ থেকে একটি চারা গাছ জন্মাবে। এই চারাগাছটিই আমাদের নির্মিয়মান চলচ্চিত্রটি। যেমন : শব্দ হল - ঈর্ষা।
০৩) এবার সেই শব্দটি থেকে একটি বাক্য রচনা করার চেষ্টা করুন। বাক্যটি চারাগাছটি কত বড় হবে সেটা নির্ধারণ করে দেবে। যেমন : ঈর্ষা মানুষের সর্বনাশ করে।
০৪) এই বাক্যটি এমন হবে যেন গল্পের শুরু, মধ্য ও শেষ বিষয়ে একটা আভাস দেয়। যেমন : ঈর্ষা মানুষের সর্বনাশ করে - এই বাক্যে একটা গল্প শুরু হবে ঈর্ষা দিয়ে এবং মধ্যভাবে ঈর্ষার মাধ্যমে কেউ কারো ক্ষতি করবে এবং গল্পের শেষে তার হবে সর্বনাশ। তার মানে হল এই বাক্যটি এমন যে, এই বাক্যটি থেকে এমন একটি গল্প তৈরি করা সম্ভব - যার শুরু, মধ্য ও শেষ আছে।
০৫) এই বাক্যের চারপাশে সাদা কাগজের মধ্যে ঈর্ষা ও সর্বনাশ সংক্রান্ত যত শব্দ মনে পড়ে সবগুলো শব্দ লিখে ফেলুন। প্রত্যেকটি শব্দ দিয়ে একটি করে ঘটনা তৈরি করার চেষ্টা করুন। কিন্তু এই ঘটনাগুলো মূল বাক্যের বিপরীত কোন বক্তব্য প্রকাশ করবে না।
যেমন : লিখুন, ক্ষতি করা, চুরি করা, আগুন লাগানো, এসিড মারা, কান ভাঙ্গানি দেয়া - এই প্রতিটি কাজ ঈর্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত ।
আবার সর্বনাশের সঙ্গে সম্পর্কিত শব্দ হতে পারে - মারামারি হওয়া, সংঘর্ষ হওয়া, দাঙ্গা লাগা, টাকা হারানো, মামলা -মোকদ্দমায় জড়ানো, লুট হওয়া, ভাংচুর হওয়া, অসুস্থ হওয়া ইত্যাদি।
০৬) এই ভাবে শব্দ লিখে লিখে কাগজটি ভরে ফেলুন। যত বেশি শব্দ লেখা যায়, ততই ভালো। তবে শব্দগুলির মধ্যে দেখার ও শোনার উপাদান থাকলে ভালো হয়। কেননা চলচ্চিত্র তো দেখা ও শোনার মাধ্যম। কিন্তু এমন কোন শব্দ লেখবেন না যেটা এই মূল বক্তব্য বা বাক্যটির সাথে সম্পর্কিত নয়।
০৭) বীজ থেকে পুরো বৃক্ষ হতে যেমন নানা দুর্যোগ পেরুতে হয়, তেমনি অনেক বাধা বিঘ্ন ঘটার মতো ঘটনার কথা লিখুন। তবে সেই সব ঘটনা এই কাগজে নয়, অন্য কোন কাগজে লিপিবদ্ধ করুন।
০৮) তার মানে দাঁড়াল এই, আপনি মূল বক্তব্যটি দিয়ে এমন একটি বাক্য রচনা করবেন যেটা গল্পের শেষ, মধ্য ও শুরু প্রকাশ করবে। বিশেষ করে গল্পের শেষটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গল্পের শেষ কিভাবে হবে সেটাই আগে নির্ধারণ করে নিন।
এই যে কাজটা করলাম, এটাই হল মগজের ঝড় বা ব্রেইন স্টর্মিং। একটা ভালো গল্প লেখার জন্য মগজে ঝড় তুলে বিষয়টা আগে বুঝে নিতে হবে। এটা হল সহজ পন্থায় মগজের ঝড়। নানাভাবে মগজের ঝড় তোলা যায়। এই কাজটি নতুনদের জন্য খুবই জরুরী। যারা অভিজ্ঞ তাদের জন্য এই রকম মগজের ঝড় না তুললেও চলবে।
পর্ব - ০৩
সৃজনশীলতার যাদুর সঙ্গে এবার মেশাই জ্ঞানের নেশা :
সৃজনশীলতার যাদুর জগৎ সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা দেয়া গেছে। মগজের ঝড় তুলে আপনি সৃজনশীলতার জগৎ সম্পর্কে সামান্য ধারণা নিয়েছেন। এবার আসুন এই যাদুর সঙ্গে মেশাই জ্ঞানের নেশা। কেননা চলচ্চিত্র এই যাদু ও নেশার জগৎ।
কাগজে কলমে সিনেমার যে গল্পটি লেখা হয় সেটাকে বলে চিত্রনাট্য। আগে চিত্র পরে নাট্য। এতে চিত্রও আছে, নাট্য আছে। তাহলে চিত্র ও নাট্য উভয় সম্পর্কে জানতে হবে।
চিত্রনাট্য লিখতে হলে যা যা জানতে হবে --
বিষয়বস্তু :
যে বিষয়বস্তু নিয়ে আপনি সিনেমা বানাবেন তার সম্পর্কে জানতে হবে। একজন সাংবাদিক যেভাবে একটা সংবাদ লেখার আগে ঘটনা সম্পর্কে জেনে নেয়, তেমন করে জেনে নিতে হবে। অথবা একজন গোয়েন্দা যে রকম গোপনে একটা বিষয় সম্পর্কে জেনে নেয়, সেভাবে বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে হবে। তারপর ওই বিষয়ে সম্ভাব্য সব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। সেক্ষেত্রে বইপত্র, পত্রিকা, সিনেমা, নাটক এবং ইন্টারনেট হতে পারে উৎস। মোট কথা বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান না থাকলে ভালো সিনেমার গল্প লেখা যায় না।
বিষয় বেছে নেয়ার সহজ কৌশল হল, নিজের বা পরিচিত জনের জীবন কাহিনী বেছে নেয়া। তার সঙ্গে নিজের কল্পনা ও সৃজনীশক্তি মিলিয়ে বানানো যায় চমৎকার গল্প।
অনুশীলনী :
০১) একটি ছোট নোট বুক ও কলম নিন।
০২) যে বিষয়ে লিখতে চান সে বিষয় সম্পর্কে কয়েক জনের সাক্ষাৎকার নেন। সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় যে ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইবেন, সেই ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, বয়স, পেশা, ধর্ম, জাতীয়তা, তার সঙ্গে পরিবার, সহকর্মী, সহপাঠী, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজনের সম্পর্ক খুজে বের করুন।
০৩) একই বিষয় নিয়ে রচিত উপন্যাস পড়ুন। পত্রিকায় এর সম্পর্কিত কোন খবর থাকলে পড়ুন। অন্যান্য বই পড়ুন। ম্যাগাজিন পড়ুন। ইন্টারনেট ঘাটুন। নাটক ও সিনেমা দেখুন।
মূলবক্তব্য বা প্রেমিজ :
মগজের ঝড় তুলতে গিয়ে আমরা মূলবক্তব্য নিয়ে কাজ করেছি। ফলে আমরা ইতিমধ্যে জানি প্রত্যেকটি গল্পেরই একটি মূল বক্তব্য থাকে। একই বিষয়ে গল্প লেখা হলেও মূলবক্তব্য ভিন্ন হয়।
যেমন : ০১) প্রেম একটি স্বর্গীয় বিষয়।
০২) প্রেম কেবল কাঁদায়।
এই দুটি মূল-বক্তব্যের বিষয় একই কিন্তু বক্তব্য ভিন্ন।
মগজের ঝড় তোলার কৌশল কাজে লাগিয়ে মূল বক্তব্য নির্ধারণ করা যায়।
প্লট বা বৃত্ত :
প্লট বা বৃত্ত হল কাহিনী। যে বিষয়ে সিনেমা বা নাটক বানাতে চান, সেই কাহিনীকে তত্ত্বীয় ভাষায় বলা হয় প্লট বা বৃত্ত। কাহিনীর মধ্যে ২ ধরনের কাহিনী থাকে। একটি হল মূল কাহিনী বা মেইন প্লট। যেই লোকটি কাহিনীর প্রধান চরিত্র, তার কাহিনীটিই হল মেইন প্লট বা প্রধান বৃত্ত। এর বাইরে অন্য কোন চরিত্রের কাহিনী যুক্ত থাকলে সেটাকে বলা হয় সাব-প্লট বা অপ্রধান বৃত্ত। সাব-প্লট বা অপ্রধান বৃত্ত মূলত মেইন প্লট বা প্রধান বৃত্তের কাহিনীকে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
সিনেমার প্লট বা বৃত্ত তৈরির ক্ষেত্রে বিবেচ্য :
০১) গল্পটি কি দরকার আছে ?
০২) এ গল্পটি কী বোঝায় ? উদ্দেশ্য কী ?
০৩) এ সিনেমাটি কি নতুন কোন কিছু বলে ?
অনুশীলনী :
০১) একটি এ-ফোর সাইজের কাগজ নেন।
০২) পুরো গল্পটি এক পাতায় লিখুন।
০৩) এ ক্ষেত্রে কোন অতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা করবেন না। কেবল ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত লিখে যান।
দ্বন্দ্ব /সংঘাত :
সিনেমা বা নাটকের গল্পে ২টি প থাকে। সেটা হতে পারে নায়ক বনাম প্রতি-নায়ক, নায়ক বনাম প্রকৃতি, নায়ক বনাম রাষ্ট্র ইত্যাদি। আরেকটি দ্বন্দ্ব হল নিজের সঙ্গে নিজের দ্বন্দ্ব - যাকে বলা হয় আত্ম -দ্বন্দ্ব। একই সাথে গল্পের মধ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে আত্ম-দ্বন্দ্ব ও বহির্মুখী দ্বন্দ্ব। ফলে গল্প হয়ে উঠবে আরও নাটকীয়।
দর্শক হিসেবে মানুষ সব সময় লড়াই বা প্রতিযোগিতা দেখতে পছন্দ করে। এ জন্যই প্রতিটি খেলাতেই ২টি পক্ষ থাকে। এক পক্ষ জেতে ও অপর পক্ষ হারে। এই হারজিত সিনেমার কাহিনীতেও থাকে। সাধারণ নায়ক জেতে ও প্রতি-নায়ক হারে। আবার কখন নায়ক হেরে যায়। কোনটা হবে সেটা নির্ধারণ করবেন আপনি।
অনুশীলনী :
০১) আপনার পরিচিত একজন মানুষকে বেছে নিন।
০২) খুঁজে বের করুন তার সঙ্গে কার সংঘাত আছে।
০৩) কেন সংঘাত ? কোন বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ?
০৪) আপনি কার প নেবেন ? কেন ?
০৫) আপনার চোখে এই দ্বন্দ্বে কে নায়ক ও কে প্রতি-নায়ক ?
সাসপেন্স /টেনশন / উৎকণ্ঠা :
তারপর কী হবে - এই সাধারণ চিন্তাটা আসে উৎকণ্ঠা থেকে। উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করতে হয় গল্পের মধ্যে। কেননা, উৎকণ্ঠা দর্শককে পরবর্তী উৎকণ্ঠা দেখার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তোলে। উৎকণ্ঠা ছাড়া সিনেমা হবে ম্যাড়মেড়ে।
একশনে তৈরি হয় উৎকণ্ঠা। চোর পালাচ্ছে, তার পিছু নিয়েছে পুলিশ। দর্শকের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হবে। চোরকে কি ধরতে পারবে পুলিশ ? সিনেমায় উৎকণ্ঠা সৃষ্টির জন্য দুটি দৃশ্যকে পাশাপাশি দেখানো হয়। যেমন : নায়িকা শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। ওদিকে নায়কের ভুল ভেঙ্গেছে। সে তাকে আনতে গেছে তার বাড়ি। বাড়ি থেকে স্টেশনের দিকে রওয়ানা হয়েছে। নায়িকা টিকেট কাটছে। নায়ক গাড়িতে ছুটছে। নায়িকা ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছে ট্রেনের দিকে। নায়কের গাড়ি ট্রাফিক জ্যামে।
এই রকম পাশাপাশি দুটি স্থানের দৃশ্য দেখিয়ে সিনেমায় দর্শক মনে চরম উৎকণ্ঠা তৈরি করা যায়।
সংলাপে তৈরি হয় উৎকণ্ঠা।
যেমন : নায়ক : আমি যাব।
নায়িকা : আমি যাব না।
ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল উৎকণ্ঠা। তারা কি আদৌ যেতে পারবে ?
এইভাবে একশন বা নাট্যক্রিয়া এবং সংলাপে উৎকণ্ঠা তৈরি করতে হবে।
অনুশীলনী :
০১) একটি গল্পের মধ্যে অনেকগুলো ঘটনা লিখতে শুরু করুন। ঘটনাগুলোর নাম্বার দিন।
০২) প্রতিটি ঘটনা লিখুন একটি বাক্যে।
০৩) এমনভাবে লিখুন যেন তারপর কী হবে সেটা জানতে কৌতুহল তৈরি হয়।
০৪) যতক্ষণ পর্যন্ত এই কৌতুহল বা উৎকণ্ঠা তৈরি না হবে ঘটনাগুলো সাজাতে থাকুন, নতুন ঘটনা যোগ করুন, পুরোনো ঘটনা বদলে ফেলুন।
চরিত্র :
কোন একজন মানুষের জীবনে কাহিনী নিয়ে হয় নাটক বা সিনেমা। যেই মানুষটির কাহিনী নিয়ে নাটক বা সিনেমা হয় সেই মানুষটি হল চরিত্র।
একটি মানুষের চরিত্র বুঝতে হলে তার ৩টি দিক বুঝতে হয়। তার ব্যক্তিগত দিক, পারিবারিক দিক ও সামাজিক দিক। চরিত্রের নাম, বয়স, পিতা-মাতা, বন্ধু বান্ধব সবাইকে দেখে চরিত্রটি সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
সিনেমার চরিত্র তৈরির ক্ষেত্রে বিবেচ্য :
০১) চেহারা, ০২) পোশাক, ০৩) বয়স, ০৪) কার্যকলাপ ০৫) সংলাপ, ০৬) অন্য লোক তার সম্পর্কে যা বলে। ০৭) সে নিজের সম্পর্কে যা বলে। ০৮) রক্ত মাংসের মানুষ হতে হবে। ছাচে ঢালা চরিত্র বাদ দিতে হবে। ০৯) চিত্রনাট্যকারকে চরিত্রের ভেতর থেকে কথা বলতে হবে। ১০) চরিত্র চিত্রণের ক্ষেত্রে এমন কোন আচরণ থাকতে পারে - যা ঘটনার সাথে সম্পর্কিত না হলেও চরিত্র চিত্রণের জন্য ব্যবহৃত হবে। ১১) চরিত্রের মধ্যে একটা ক্ষুধা থাকবে। একটা বিশেষ বাতিক থাকতে পারে।
অনুশীলনী :
০১) একটি পরিচিত মানুষকে বেছে নিন।
০২) নিন্মের ছক অনুসারে তার সম্পর্কে সব তথ্য লিখে ফেলুন। এটাকে বলা হয় ত্রৈমাত্রিক চরিত্রের অস্থি সংস্থান। এটি তৈরি করেছেন লাজোস এগরি।
চরিত্রের নাম :
(ক) শরীরতাত্ত্বিক মান
১. লিঙ্গ : , ২. বয়স : , ৩. উচ্চতা : , ৪. ওজন : , ৫. চুলের বর্ণ : , ৬. চুর বর্ণ : , ৭. চর্মের বর্ণ : , ৮. আঙ্গিক বৈশিষ্ট্য : ৯. আকৃতি : [ দৃষ্টিনন্দন : অতি ও কম ওজন : পরিচ্ছন্ন : পরিপাটি : খোসমেজাজী : মস্তিষ্ক-মুখ- বাহুর আকৃতি : অসমতা : ] , ১০. বিকৃতি : , ১১. বংশানুবৃত্তি :
(খ) সমাজতাত্ত্বিক মান
১. শ্রেণী : [ শাসকশ্রেণী : মধ্যবিত্ত : পাঁতিবুর্জোয়া : শ্রমজীবি : ], ২. বৃত্তি : [ কাজের প্রকৃতি : কাজের সময় : মাত্রা : আয় : কাজের শর্তাবলী : প্রতিষ্ঠানের ভিতরে বা বাইরে : প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক : কাজের যোগ্যতা : ]
৩. শিক্ষাদীক্ষা : [ শিক্ষার পরিমাণ : শিক্ষালয়ের মান: পরীক্ষার ফল : প্রিয় বিষয় : কোন কোন বিষয় সবচেয়ে কম জানে : দতা : ]
৪. পারিবারিক জীবন : [ পিতা মাতা কি জীবিত নাকি মৃত ? তাদের উপার্জন মতা : পিতা : মাতা : পিতামাতার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে কি না : বিচ্ছেদের কারণ : পিতামাতার মানসিক উন্নতির মান : তাদের দোষ : পিতা : মাতা : আসক্তি : পিতা :
মাতা : বিরাগ বা উপো : পিতা : মাতা : চরিত্রের সংগ্রামশীলতা : পিতা : মাতা : ] , ৫. ধর্ম : , ৬.জাতি : ৭. সামাজিক প্রতিষ্ঠা : (বন্ধুবান্ধবমহলে, সভা-সমিতি-খেলাধূলায় নেতা কি না) : ৮. রাজনৈতিক মতবাদ : ৯.আমোদ প্রমোদ, বাতিক : (বই, খবরের কাগজ, মাসিক পত্রাদি পড়ার ঝোঁক) :
(গ) মনস্তাত্ত্বিক মান
১. যৌনজীবন : , ২. নৈতিক মান : , ৩. ব্যক্তিগত প্রকৃতি, উচ্চাকাঙ্ক্ষা : , ৪. আশা ভঙ্গ, প্রধান অপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা : ৫. মেজাজ : [ কড়া মেজাজী : নরম মেজাজী : নৈরাশ্যবাদী : আশাবাদী : ] ,৬. জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি : [ সমর্পিত : সংগ্রামী : পরাজিতন্মন্য : ]
৭. মনোগ্রন্থি : [ মনোবোধ আচ্ছন্ন : অভ্যাসগত কাজের বিরতি : কুসংস্কার : বাতিক : আতংক : ] ৮. লোক ব্যবহার : [ বহির্মুখী : অন্তর্মুখী : উভয়মুখী :
৯. দক্ষতা : [ ভাষাজ্ঞান : বিশেষ কর্মদক্ষতা : ]
১০. গুণ : [ কল্পনাশক্তি : বিচারশক্তি : সুরুচিবোধ: ভারসাম্য : ]
১১. বুদ্ধির মানাঙ্ক :
০৩) সবগুলো তথ্য একবার মনোযোগ দিয়ে পড়ুন । আশা করি, তার চরিত্রটি সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
একশন বা নাট্যক্রিয়া :
নাট্যক্রিয়া বা একশন সিনেমার গতি তৈরি করে। আমরা প্রতিদিন কত শত কাজ করি। সে গুলোর সবই ক্রিয়া বা একশন। এই একশন দেখা যায় শরীরের মাধ্যমে। আমরা হাঁটি, দৌড়াই, বসি, খাই, ঘুমাই - এগুলো সবই একশন। আবার কিছু একশন আছে যেগুলো আমাদের শরীর দিয়ে দেখা যায় না, দেখা যায় মুখভঙ্গির মাধ্যমে। সেই একশনটা ঘটে মনের মধ্যে। মনের সেই অনুভূতি চোখের তারায়, চাহনিতে, ভ্রুর সঞ্চালনে, ঠোঁটের ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে। আমরা বুঝে নেই চরিত্রটির মনের অবস্থা।
অনুশীলনী :
০১) আপনার পরিবারের একজনকে বেছে নিন।
০২) দূর থেকে তার কাজকর্ম লক্ষ্য করুন।
০৩) সে যা যা করছে সেটা লিখে ফেলুন।
০৪) তার কাজের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ অন্য কেউ কী করছে ? সেটাও লিখুন।
০৫) এই সব কাজ করতে গিয়ে তার চেহারার ভঙ্গির কী কোন পরিবর্তন হচ্ছে ? সেই পরিবর্তন ও ভঙ্গিটি লিখুন।
০৬) তার এসব কাজের সঙ্গে কোন কোন বস্তু জড়িত হয়ে পড়ছে। যেমন : ফোন, কম্পিউটার, থানা-বাসন, টেবিল চেয়ার, বই-কলম ইত্যাদি। সে যে সব বস্তু ব্যবহার করে কাজ করছে সেই বস্তুগুলোর নামও লিখুন।
সংলাপ :
আপনি যেভাবে কথা বলেন, সেটা লিখে ফেললেই হয়ে যাবে সংলাপ। সুতরাং সিনেমার চরিত্রগুলো পরস্পরের সাথে যে কথোপকথন করে সেটাই সংলাপ। সিনেমায় সংলাপ তথ্য দেয়, গল্পকে এগিয়ে নেয় এবং ভবিষ্যৎ ঘটনা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়।
সিনেমার সংলাপ তৈরির ক্ষেত্রে বিবেচ্য : (সংলাপের কাজ)
০১) গল্প এগিয়ে নেয়। ০২) চরিত্রকে প্রকাশ করে। ০৩) ঘটনা ও চরিত্র সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য দেয়। ০৪) আমাদের চারপাশের বাস্তব চরিত্রের মতো সংলাপ হবে। ০৫) আগের সংলাপের সাথের পরের সংলাপের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। ০৬) বিভিন্ন ধরনের চরিত্র বিভিন্ন রকম করে সংলাপ বলবে। ০৭) চরিত্র কিভাবে সংলাপ শোনে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ ।
সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষা প্রয়োগ করলে এবং নানা চরিত্র নানা ভাষায় কথা বললে বৈচিত্র্য তৈরি হয়।
অনুশীলনী :
০১) জনসমাগম আছে এমন একটা জায়গায় যান। যেমন : রেল স্টেশন, বাস স্টেশন বা কোন থিম পার্ক।
০২) কয়েকজনের কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করুন।
০৩) রেকর্ডকৃত কথোপকথন মনোযোগ দিয়ে শুনুন। খেয়াল করে দেখুন একেক জন একেকভাবে কথা বলছে।
০৪) রেকর্ড করা প্রত্যেকের সংলাপ লিখে ফেলুন। বুঝতে কি পারছেন মানুষ বাস্তবে কিভাবে কথা বলে ?
পর্ব -০৪
মন-ভোলানো দর্শক থেকে মগজ খাটানোর দর্শক : আরও জ্ঞানের নেশা
এবার কিছু জ্ঞানের কথা বলার আগে পৃথিবী বিখ্যাত দুটি চলচ্চিত্র দেখে নিন। প্রথমটি হল প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের “হীরক রাজার দেশে” এবং আরেকটি হল বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার জ্যামস ক্যামেরনের সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র “টাইটানিক”।
কিভাবে দেখবেন চলচ্চিত্র ?
এতকাল আপনি মনের মাধুরী মিশিয়ে চলচ্চিত্র দেখেছেন, মগজ খাটান নি। এবার মগজ খাটিয়ে চলচ্চিত্র দেখবেন। দর্শক হিসেবে নয়, চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে চলচ্চিত্র দেখবেন।
সেভাবে দেখার একটা সাধারণ নিয়ম আছে।
অনুশীলনী :
০১) কাগজ কলম নিন।
০২) সত্যজিৎ রায়ের “হীরক রাজার দেশে” চলচ্চিত্রটি আপনার ডিভিডি প্লেয়ারে চালু করুন।
০৩) প্রথম দৃশ্য থেকে ধীরে ধীরে দেখুন। বারে বারে থামুন।
০৪) শটগুলো লিখে ফেলার চেষ্টা করুন।
একবার ক্যামেরা চালু হওয়ার পর ক্যামেরা বন্ধ হওয়া পর্যন্ত যে অংশটুকু গৃহীত হয়, সেটাই একটি শট।
শটগুলো লেখার ক্ষেত্রে ক্যামেরা দূরত্ব , ক্যামেরা কোণ ও ক্যামেরা সঞ্চালন বিবেচনা করুন।
বস্তু থেকে ক্যামেরা দূরত্বের উপর ভিত্তি করে শটের অনেকগুলো নাম দেয়া হয়েছে।
যেমন :
ক্যামেরা দূরত্বের উপর ভিত্তি করে শটের বিভাজন :
০১) এক্সট্রিম লং শট (অতি দূরবর্তী শট) : একটা পুরো গ্রাম, প্রান্তর ইত্যাদি দেখানোর জন্য দূর থেকে যে শট নেয়া হয় সেটাই এক্সট্রিম লং শট।
এক্সট্রিম লং শট ছাড়া অন্য সব শট বোঝার জন্য মানুষের শরীর থেকে ক্যামেরা দূরত্ব বিবেচনা করা হয়। সেই দূরত্বের কারণে শরীরের কতটুকু ক্যামেরা ধারণ করা হচ্ছে সেটা বিবেচনা করে শটগুলোর নামকরণ করা হয়েছে।
০২) লং শট : ফ্রেমে একটি মানুষের পুরো শরীর আসবে। সেই সাথে মানুষটির পেছনের বেশ কিছু জায়গা এবং সামনে বেশ কিছু জায়গা ফ্রেমে থাকবে। এটাই লং শট।
০৩) ফুল শট : মানুষের পা থেকে মাথা পর্যন্ত শট। মানুষের সামনে কোন দৃশ্য বা ফোরগ্রাউন্ড এই শটে থাকে না। লং শটের ফোরগ্রাউন্ড বা সামনের জায়গা ছেটে দিলেই সেটা ফুল শট হয়ে যায়।
০৪) মিড লং শট : পায়ের পাতার উপর থেকে ও হাঁটুর নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে মিড লং শট বলে।
০৫) মিড শট : হাঁটুর উপর ও কোমরের নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে মিড শট বলে। তাছাড়া বসা অবস্থায় যে কোন শটকেও মিড শট বলে।
০৬) মিড কোজ শট : মিড শটে একটি মানুষ না থেকে যদি একাধিক মানুষ থাকে তবে তাকে মিড কোজ শট বলে।
০৭) কোজ শট : নাভির উপর থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে কোজ শট বলে।
০৮) কোজ আপ : বুক থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে কোজ আপ বলে।
০৯) টাইট কোজ আপ : গলার নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত শটকে টাইট কোজ আপ বলে।
১০) বিগ কোজ আপ : থুতনি থেকে কপাল পর্যন্ত শটকে বিগ কোজ আপ বলে।
১১) এক্সট্রিম কোজ আপ : শুধুমাত্র ঠোঁট, চোখ বা গাল ইত্যাদির শটকে এক্সটিম কোজ আপ বলে।
ক্যামেরা কোণের উপর ভিত্তি করে শটের বিভাজন :
০১) হাই এঙ্গেল শট : আই লেভেল থেকে ক্যামেরা উপরে স্থাপন করে নিচের দিকে শট নিলে তাকে হাই এঙ্গেল শট বলে।
০২) লো এঙ্গেল শট : আই লেভেল থেকে ক্যামেরা নিচে স্থাপন করে উপর দিকে শট নিলে তাকে লো এঙ্গেল শট বলে।
০৩) স্ট্রেইট এঙ্গেল শট বা ফ্রন্ট এঙ্গেল শট : আই লেভেল বরাবর ক্যামেরা স্থাপন করে শট নেয়া হলে সেটা স্ট্রেইট এঙ্গেল বা ফ্রন্ট এঙ্গেল শট।
০৪) টপ শট : হাই এঙ্গেল শটের চূড়ান্ত অবস্থা হল টপ শট। একেবারে মাথার উপর থেকে শট নেয়া হলে তাকে টপ শট বলে।
ক্যামেরা সঞ্চালনের উপর ভিত্তি করে শটের বিভাজন :
ক্যামেরা সঞ্চালন ২ প্রকার : ০১) নিজের অক্ষের উপর ক্যামেরা সঞ্চালন, ০২) ক্যামেরার স্থান পরিবর্তন।
০১) নিজের অক্ষের উপর ক্যামেরা সঞ্চালন :
ক) প্যান : নিজের অক্ষের উপর ক্যামেরার আনুভূমিক সঞ্চালনকে প্যান বলে। আমরা যে রকমভাবে ডান থেকে বায়ে বা বা থেকে ডানে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাই, ঠিক সেভাবে ক্যামেরা এক পাশ থেকে অন্য পাশে সঞ্চালন করাকেই প্যান বলা হয়।
খ) টিল্ট আপ/ টিল্ট ডাউন : নিজের অক্ষ বরাবর ক্যামেরা নিচ থেকে উপরে উঠলে টিল্ট আপ এবং উপর থেকে নিচে নামলে টিল্ট ডাউন বলে। আমরা যেভাবে ঘাড় উচু করে আকাশ দেখি সেটাকে ক্যামেরা করলে টিল

লিংক

1 comment:

  1. খুবই সুন্দরভাবে বুঝানো হয়েছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    ReplyDelete