Wednesday, May 16, 2018

প্রশ্নফাঁস ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকালের পরীক্ষা

একদিন পত্রিকার লিড নিউজ হল....

"প্রশ্নফাঁস ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকালের পরীক্ষা""

পত্রিকার লিড নিউজ দেখে সবার তো চোখ ছানাবড়া। OMG এটা কীভাবে সম্ভব। ফেসবুক, টুইটার চারদিকে আলোচনার ঝড় উঠে গেল। আমাদের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কী তবে ঘোড়ার ঘাস কাটে নাকি ফোনে লুডুস্টার খেলে। এতোদিনে রেকর্ড ব্রেক করে কীভাবে প্রশ্নফাঁ ছাড়া পরীক্ষা হল! এবার তো গিনেস বুকে নাম উঠতে যাচ্ছে তবে। বিসিএসে নতুন প্রশ্ন সংযোগ হবে, "কত তারিখে প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা হয়েছে?"
এইতো কিছুদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী ভালোয় ভালোয় 'ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড 2017' পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন। সবাই কি সুন্দর পুত পুত করে অভিনন্দন জানালেন। তবে কি পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেবে কমিটি! এটা নিয়েই জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ সেই পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য জোরালো দাবি তুললো। নাহ, এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য না কিছুতেই। পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা ধারা চালু ছিল। সেটা তিনি ধরে রাখতে পারেন নি। এটা তার ব্যর্থতা।
লেখকরা বড় বড় কলাম লিখতে শুরু করলো। সারাদেশের সম্মানিত শিক্ষক সমাজ শাহবাগে এসে আমরণ অনশন করতে লাগলো। প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা হু, ছেলের হাতের মোয়া পাইছে নাকি! ব্যানারে ব্যানারে শ্লোগান, "প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা মানি না, আমরা কিছু জানি না।" কেউ প্লেকার্ডে লিখে আনছে, প্রশ্নফাঁস ছাড়া প্রহসনের পরীক্ষা, শিক্ষামন্ত্রী মুড়ি খা।" একজন নামজাদা লেখক 'তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি' নামানুসারে বই লিখলো 'তোরা ঢাকার শহর প্রশ্নে ভাসাই দে'। যত যা হোক প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা জাতির বিবেক হয়ে শিক্ষকসমাজ কীভাবে মেনে নেবে হু।
শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে ডাকলেন। এক সাংবাদিক মুখের উপর প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন, "আপনার আমলে প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা হল আপনি এটার কি ব্যাখ্যা দিবেন।" মাননীয় মন্ত্রী বসুন্ধরা টিস্যুতে ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, "দেখুন, আমি ঘুমে থাকি, আমার খবর থাকে না।" তারপর মুখ ফসকে বলে ফেললেন, সত্যি বলতে আমি নিজেও অবাক, কীভাবে হল এই ভুলটা। আমি নিজের ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি এবং আজই এই ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু পদত্যাগ পত্র লেখার কাগজ খুঁজে পাচ্ছি না বলে লেখা হয়ে ওঠে নি।"
অতঃপর,
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিজি প্রেস থেকে শুরু করে পাড়ার ফটোকপির দোকান সব খতিয়ে দেখা হল। ফেসবুক, টুইটার, ইমো, ইনস্টগ্রাম, ট্যাংগো, উই চ্যাট সব চেক আপ করা হল, না কোথাও প্রমাণ মিলল না। ফেসবুকে যে পেইজে ফোন নাম্বার দিয়ে প্রশ্ন বিক্রি করে ওদের পেইজে গিয়ে দেখা গেল স্ট্যাটাস দিয়ে রাখছে, ফিলিং স্যাড।
তবে কি সত্যি সত্যি হয়েছে, আসলেই হয়েছে?.. কী? প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা।

©রাজীব নন্দী

No comments:

Post a Comment