Saturday, May 26, 2018

একটি নিগূঢ় দাম্পত্য কলহ

উপন্যাসটিতে একটি কথা বারবার বলা হয়েছে তা হল, মানুষ তার নিজেকেই সবচয়ে কম চেনে। উপন্যাস শেষ করার পর যথন থ হয়ে রইলাম তখন আমার কেবল মনে হল, পুরষ নারীকে সবচেয়ে কম চেনে কখনো কখনো চিনতেই পারে না। পৃথিবীর সব রহস্যের প্যাঁচ হয়ত একদিন খুলে যেতে পারে, কিন্তু নারী মনের রহস্য পুরুষ কখনো জানতে পারবে না। পুরোটা জীবন শরীরের প্রতিটা কোষের অধিকার দিলেও বেলাশেষে চোখের কোনের কালো বিন্দুটা অপরিচিতই থেকে যায়। তবে কি সত্যি নারীকে চেনা সম্ভব নয়! আবার পুরুষ এদের প্রেমে পড়ে যতই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাই বলুক না কেন এদের আসল কথাটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অন্যদিকে পুরুষ নারীর সব পরিবর্তন ঠিকঠাক বুঝতে বরাবরই ব্যর্থ হয়।

শৈবাল উপন্যাসের নায়ক। কামুক পুরুষ। মাতাল যেমন রোজ মদ না খেলে থাকতে পারে না, তার দেহের ক্ষুধাটাও যেন অনেকটা সেরকমের। দেহকে ছাপিয়ে স্ত্রী শিখার মনের চৌকাঠ পেরুতে পারেন নি। নিজের বাবা হওয়ার অযোগ্যতার কথা স্ত্রীর কাছে গোপন করার ফল যে স্ত্রী বিয়োগের কষ্ট হয়ে ফিরে আসবে সেটা সে বুঝতে পারেন নি। যখন বুঝতে পেরেছিলেন তখন হয়ত বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল। তবে কি দাম্পত্য জীবনের সব সমস্যা খোলাখুলি বলে দেয়াই উচিত?

নারী রহস্যময় হলেও অকপটে মনের সব কথা বের করে দিতেও অসুবিধা হয় না সেটা প্রমাণ পাওয়া যায় শিখা যখন নিজ থেকেই মামা উমেশের সাথে ঘটনাচক্রে শারিরীক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সেটার সরল স্বীকারোক্তির মাধ্যমে। মা হওয়ার অদম্য বাসনা নিয়ে হয়ত বেঁচে থাকে প্রত্যেক নারী। কিন্তু সে সন্তান ভালোবাসার ফসল হওয়া চাই। শৈবাল যখন সবকিছূ মেনে নিয়ে উমেশের ছেলেকেই নিজের ছেলে বলে মেনে নিতে চেয়েছিল তখন শিখা বলেছিল, এ সন্তান রজতদার হলেও আমি মেনে নিতে পারতাম কিন্তু এ যে উমেশের রক্ত। রজতদা শিখার বাল্যকাল থেকেই পরিচিত। দুজন দুজনকে ভালোবাসতো কিন্তু মুখ ফুটে বলার আগেই মাঝখান দিয়ে শৈবাল এসে শিখাকে তুলে নিয়ে আসল। তাতে কি মনে মনে ভালোবাসাটা তো রয়ে গেছে। মুখে যতই ভদ্রতার স্পিচ ফুটাই না কেন মানুষ মাত্রই যে আমরা দ্বিচারী সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মাঝেমধ্যে অবিবাহিত কলেজ অধ্যাপক রজত শিখার বাড়িতে এসে জানান দিয়ে যেত কাউকে না পেলেও আজীবন ভালোবাসা যায়। বিয়েটাই ভালোবাসার সফল পরিণতি নয় বরংচ এটা বিশ্বাস করাটা হল স্বৈরাচারীতা।

কেউ যখন নিজের সমস্ত পাপের কথা অকপটে স্বীকার করে নেয় তখন তাকে ক্ষমা বই শাস্তি দেয়া যায় না, সে আপনা আপনিই শাস্তি পায়। শিখাও নিজের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেটাই করলো। একটি গর্ভপাত শরীর হয়ত শরীরকে বিশুদ্ধ করে দিতে পারে কিন্ত মনের অশুদ্ধতার হাত থেকে রেহাই দেয় না। সেটা ভেবেই কি বিয়ের আট বছর পর এ সিদ্ধান্ত! 

উপন্যাস: জবাব
লেখক: সমরেশ বসু


২৬.০৫.২০১৮

No comments:

Post a Comment