Tuesday, July 24, 2018

একটা জীবন নাহয় কেটে যাক তীব্র হাহাকারে

প্রিয় শ্রাবণ,
তুমি কি মনে মনে আমার সাথে হুট করে দেখা হয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকো? কলেজের রিসেপশন দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে কি কখনো মনে হয় না তোমাকে এক পলক দেখার জন্য আমি ভোর সাতটায় গিয়ে ওখানটায় বসে ছিলাম? নাকি আমার উপস্থিতি তোমায় বড্ড বিরক্তর জন্ম দেয়। বিরক্ত হতে হতে এতোদিনে তোমার বিরক্তির উপরও মায়া হওয়ার কথা।

যাক সে সেসব কথা।  শ্রাবণ মাসে একটা শ্রাবণপত্র না লিখলে ঠিক যেন হচ্ছে না তাই অনেকদিন পর তোমায় লিখতে বসলাম। এটা তোমায় লেখা আমার এগার নম্বর পত্র। জানি আগের একটিও তুমি পড়ো নি। আমার লেখা তোমার পড়াটা জরুরিও নয়। এ তল্লাটে তুমি পা না ফেলার যে ব্রত গ্রহণ করেছো সেটা অটুট রাখো তোমার অহমিকার মতোই। তোমার ইগোর প্রাচীরে যেন বিন্দুমাত্রও ফাটল না ধরে সেদিকে কড়া নজর রেখো। দেয়ালের ওপারে কি ঘটলো সেসব তোমার কখনোই জানার বিশেষ প্রয়োজন নেই।

আমার দ্বিতীয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলে। বারো তারিখ পরীক্ষার পর আবার পনের তারিখ পরীক্ষা ছিল। মাঝের এই দু-দিন আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ হেয়ালিপনা বোধহয় করেছি আমি। নিজেকে একটিবারও জিজ্ঞেস করি নি আমি ভুল সঠিক  কিছু করছি কিনা। আমার মন বলছে যাও অামি ছুটে গিয়েছি সেথায়। মন নামক ইঞ্জিনের সাথে শরীর নামক বগিটা লাগিয়ে দিয়েছি মাত্র। আমি জানি এসবের বিন্দুসম গুরুত্বও তোমার কাছে নেই। বারো ঘন্টা পাড়ি দিয়ে তোমায় তিন ঝলক দেখতে পেরেছি এটাই সান্ত্বনা।

আমাদের যে দিন গেছে তা কি একেবারেই গেছে? নাকি কিছু আছে অবশিষ্ট। কথার নিগরে বানানো কথামালা কি একেবারেই মূল্যহীন হয়ে গেছে? ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে গোলাপ কিনে আনে সে তো বেলাশেষে শুকিয়ে পড়ে থাকে ধুলোয়। আমিও কি তেমন একটা গোলাপ ছিলাম?  ভায়োলিনের সুমধুর সুর কেবল সংগীতের বাহবাই পায় ওটা যে তার করুণ আর্তনাদ সেকথা সবাই বেমালুম ভুলে যায়। আমি কি সুরের ছদ্মনামে সে আর্তনাদ ছিলাম?

যাক গে সেসব কথা। কালো ড্রেস পরে সামনের সিঁড়িতে তোমায় বসা দেখে আমার কলিজা ছিঁড়ে যেতে বসেছিল। নিজের কপালকে কেবল অভিসম্পাত দিতে লাগলাম, ভেতরটা যার জন্য ছিঁড়ে যাচ্ছে করুণ আর্তনাদে সে দেবি স্বয়ং আমার সামনে বসা অথচ তিনি আমার নয়। নোনা জলের চিহ্নে যার জন্য বালিশে লেগে আছে, সে আমার নয়। যাকে একবার দেখার জন্য আমি সাতবার পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে পারি, সে আমার নয়। যাকে চিৎকার করে ভালোবাসি বলতে বলতে নিজের ভোকাল কর্ডের উপর অত্যাচার করতে পারি, সে আমার নয়। যে কখনো ভালোবাসে নি তাকে এই অনুভূতি কখনোই বুঝানো যাবে না। কোনো গল্প সিনেমা দেখিয়েও শেখানো যাবে না। এটা ঠিক অন্য জগতের একটা অনুভূতি। আমি যতবারই ভাবি সে আমার নয় আমার ভেতরে ভেতরে যেন ততবারই আমি মরে যাচ্ছি, দুমড়ে মুচড়ে যেন নিমিষেই ভেঙ্গে পড়ি আমি। আবার দাঁড়াই। শেষ করে দেয়া মানে তো ভালোবাসা নয়।

শ্রাবণ, আমাকে কখনো ভালোবাসতে হবে না। আমি চাই তুমি শুধু এটুকু বুঝো যে কেউ একজন উম্মাদ হয়ে যায় তোমার কথা ভেবে। তুমি শুধু জানো কেউ একজন সত্যি সত্যি তোমাকে ফিল করে, তোমায় ভেবে ভেবে কারো শরীরে প্রচণ্ড গরমেও কনকনে শীতের কাঁপুনি দেয়। তুমি নিজেকে লুকিয়ে রাখো, আড়াল করে রাখো আজীবনের জন্য কিন্তু আমায় কেবল এই মানসিক শান্তিটা দাও যে তুমি জানো কেউ একজন তোমায় ভালোবাসে। তার ভালোবাসাটাকে তুমি গ্রহণ করতে না পারো অসম্মান করো না। তাকে ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা তুমি রাখো কিন্তু তাকে অপমান করার ক্ষমতাটা তুমি হারিয়ে ফেল ভালোবাসার দোহাইয়ে এটাই চাই।

একটা জীবন না হয়  কেটে যাকতীব্র হাহাকারে। না পাওয়ার আর্তনাদ ছটফট করুক আমার ভেতর। অনুভূতি ফ্রেমবন্দি করার সিস্টেম থাকলে আমি আমার এই অনুভূতিটা বন্দি করে রাখতাম। আমি ভয়ে তোমার কাছে যাই না তোমার কোনো কটু কথায় যদি আমার এই ডিভাইন অনুভূতিতে ক্ষয় ধরে আমি কি সেটা পুনরুদ্ধার করতে পারবো কি?  বৃদ্ধ বয়সে হাতে লাঠি নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যখনি আমার মহারাণীর কথা মনে পড়ে চোখের কোনে অশ্রধারা বইবে সেটাই হবে আমার ভালোবাসার জয়। আমি বুঝবো ভালোবাসা মানে পাশাপাশি থাকাই নয়, পাশাপাশি অনুভব করার সক্ষমতা।

যাক। লিখতে থাকলে একটা উপন্যাস হয়ে যাবে। ভালো থেকো। নববধূর শাড়ির ভাঁজের মতো, তোমার কপালের কালো টিপের মতো, তোমার যত্ন করে আগলে রাখা ইগোর মতো। এতক্ষণ শুধু  একাই বকে গেলাম। তোমার সম্পর্কে কিছু জানতেই চাই নি। কখনোই ফের উত্তর আসবে না জাতি তবুও জানতে ইচ্ছে হয়।  এখন তুমি কেমন আছ শ্রাবণ?

- কেউ একজন
২৪-০৭-২০১৮

চুমু উপাখ্যান


- চুমু বিদ্যাকে ইংরেজিতে বলে philematology আর চুমু খেতে বড্ড ভয় পাওয়াকে বলে  Philematophobia

- কারো কপালে চুমু খাওয়া মানে আপনি তার বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা বুঝায়।

- কারো গালে চুমু খাওয়া মানে তার রূপের প্রশংসা করছেন।

- কারো চিবুকে চুমু খাওয়া মানে তার কোনো কাজকে সমর্থন করা।

- কারো নাকে চুমু খাওয়া মানে ভীরুতা ।

- কারো হাতে চুমু খাওয়া মনে তুমি তাকে নিয়ে ভীষণভাবে ভাবো এবং হারানোর ভয় পাও সবসময় এটাই প্রকাশ পায় ।

- কারো ঠোঁটে চুমু খাওয়া ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

- সল্প সময়ের জন্য চুমু খাওয়া মানে আপনি একটা হুদাই কেয়ারলেস পারসন।

- বিয়ের পর বর এবং কনে প্রথম দেখায়ই যদি চুমু খায় তবে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখী হবে বলে মনে করা হয়।

- বিয়ের পর কনে প্রথমে যে লিঙ্গের শিশুকে চুমু খাবে তার প্রথমে সে লিঙ্গের শিশু হবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করে।

- কোনো পুরুষকে চুমু খাওয়ার পর যদি আপনার মুখে তার গোঁফ আবিষ্কার করেন তবে আপনি শেষ জীবনে অনেক কষ্ট পেয়ে মারা যাবেন বলে অনেকেই মনে করে।

- কোনো মৃত বন্ধুকে চুমু খেলে আপনী সাহসী হয়ে উঠবেন।

- যদি কেউ তার মৃত স্বামী বা স্ত্রীকে চুম্বন করে তবে সে খুব শিঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছে।

©রাজীব নন্দী

Wednesday, July 4, 2018

ডাক্তার মানেই কি ডাকাত?

....কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হঠাৎ জিন্স প্যান্টের ডান পকেট থেকে ফোনটা বের করে একজনকে ফোন দিল। বিশ থেকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে একদল লোক এসে হাজির হাসপাতালের সামনে। কারো হাতে লাঠি, কেউ গেট থেকে ঢুকেই এদিক সেদিক তাকাচ্ছে সুবিধাজনক কিছু পায় কিনা! হঠাৎ ঔদ্ধত্য হয়ে সামনে থাকা লোকটি বলে উঠল,
শালা কসাই, রোগীকে রোগী মনে করে না। মনে করে একেকটা ব্যবসায়ী পণ্য। কই শালার চেম্বার কই?
দাঁড়া। আগে আমার কাছ থেকে কাহিনি শুনে তারপর চিল্লাপাল্লা করিস। ডাক্তাররা সম্ভবত এক জোট হয়েছে এবং পুলিশকেও ফোন দিতে পারে। তুই আরো লোক খবর দে। আজকে ওর ডাক্তারি শিখাই দিমু ভালো মতো। বলেই লোকটি ভেতরে চলে গেল। 

....বাতাসে ফোনের রিং ভেসে যাচ্ছে আর লোকজন আসতেছে। চারপাশে লোকজন কানাঘুষা করতেছে, একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করতেছে কীভাবে মারা গেল, জোয়ান নাকি বুড়া, বাড়ি কই রোগীর। উত্তর পেয়ে কিংবা না পেয়ে ডাক্তারকে গালি দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছে।

....হাসপাতালের সামনে ছোটখাটো একটা ঈদের হাটের মত জমায়েত হয়ে গেছে। ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে উপস্থিত জনতার। সবার চোখে মুখে এমন ভাব যেন ডাক্তারের সাথে আগের জন্মের কোন শত্রুতা ছিল। রোগীর আত্মীয় স্বজন প্রায় সবাই ইতোমধ্যে ঘটিবাটি ফেলে হাজির হাসপাতালের সামনে। ভেতরে ঢোকার জন্য সবাই হুলুস্থুল শুরু করে দিয়েছে কিন্তু দরজা ভেতর থেকে লক করা।

....হঠাৎ হ্যান্ডমাইক মুখের সামনে ধরে বের হয়ে আসল সেই লোকটি যে প্রথমে ফোন করেছিল। উপস্থিত জনতার চোখে মুখে রহস্য খেলা করছে। মাইক থেকে বলতে লাগলেন, "আপনাদের মাঝে ও নেগেটিভ ব্লাড আছে কার একটু হাত তুলুন।"

থার্টি প্লাস একজন হাত তুলল। তাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হল।
তারপর মাইকে বলা হল, "সকাল থেকে অনেক খুঁজে রক্ত পাওয়া যাচ্ছিল না, রোগীর অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন তাই মিথ্যা কথা বলতে হল। সবার কাছে সরি চেয়ে নিচ্ছি।"

....সবার মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল। কেউ কেউ নিচুস্বরে গালি দিয়ে প্রস্থান করতে লাগল। মনে হল কোন ব্লক বাস্টার সিনেমা দেখার জন্য টিকেট কেটে সিনেমা হলে ঢুকেছে কিন্তু যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে শো টি বাতিল করা হল।

© রাজীব নন্দী

শুভ জন্মদিন হার্টলেস কার্ডিওলজিস্ট 2018

রাত ১২:০১ মিনিট। অনেক ভেবেচিন্তে তার নাম্বারে ডায়াল করলাম। রিং হচ্ছে আর আমার ভেতরটা ধুরুধুরু করছে। হার্টবির্ট কন্ট্রোলে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছি তবুও। আমি জানি ফোনটা কখনোই রিসিভ হবে না। আমাকে খাটিয়ায় করে কবরের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময় যদি কেউ একজন আমার ফোন থেকে আমার মৃত্যু সংবাদ জানানোর জন্য এই নাম্বারে কল করে তবুও ফোনটা রিসিভ হবে না, আসবে না কোনো রিভার্স কলও।

তবুও মিছে ভাবনা ভেতরে আকুলিবিকুলি করে চলছে। ও ফোন রিসিভ করলে আমি কী বলবো। আমার গলা দিয়ে কি কথা বেরুবে। আমি কথা গুলিয়ে ফেলবো না তো। নাকি কথা বলতে গেলে স্বপ্নের মতো আমাকে বোবায় ধরবে। ভাবতে ভাবতেই দুটো কলের সমাপ্ত হলো। ফোন রিসিভ হলো না।

আচ্ছা, ও কি আমার কলটা দেখেছে। নাকি ফোনটা ওর কাছেই ছিল না। নাকি আমার নাম দেখেই ফোনটা হাতে তুলে রিংটোন সাইলেন্ট করে আবার ফোনটা রেখে দিয়েছে। আমার নাম্বার দেখে কি ও বিরক্ত হয়েছে নাকি প্রথম উইশ করার এই পাগলামো দেখে ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি মেখে ফোন রাখতে রাখতে অজান্তেই বলে উঠেছে, পাগল একটা।
জানি না। আমি এসবের কিচ্ছুই জানি না। আমার ভাবনায় তবুও আমি সব মিশিয়ে নিয়েছি। যেভাবে ভাবনায় মিশে আছে এক পাক্ষিক ভালোবাসার গল্পটা। একটা গল্প ডালপালা ছড়ানোর জন্য কতো আর্তনাদ করে যাচ্ছে। প্রসব বেদনার অবসান ঘটিয়ে বাস্তবে বেড়ে উঠতে চাচ্ছে। কেবল তার গুটিয়ে নেয়া হাত সবকিছু নাখোস করে দিচ্ছে।

ইদানিং বড্ড অসুখ করে আমার। ভেতরে ভেতরে কুঁকড়ে উঠি। থেমে থেমে। রুদ্র গোস্বামীকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলে দিলেন আমার অসুখের কথা।
"গা পোড়েনি, জ্বর নয়, তবুও বিস্বাস মুখ
আমাকে পেয়ে বসেছে তোমাকে দেখার দীর্ঘ অসুখ।"
কি ভয়াবহ ব্যাপার। বিজ্ঞানের এই যুগে আমার অসুখ সারানোর মতো কোনো ডাক্তার নেই।

জানি কেউ অপেক্ষা করে না আমার উইশের জন্য। কারো পাহাড়সমান ইগো কখনোই পরাজিত হবে না। তবুও সে নাহয় জেতার দলেই থাকুক, আমি বেহায়ার হয়েই বলি...
"শুভ জন্মদিন হার্টলেস কার্ডিওলজিস্ট"
ভালোবাসায় থেকো, ভালোবাসায় রেখো।
ওহ হ্যাঁ.. শুধু আমার এবং আমাকে।

একজন নূরে আলম

গতরাতে লঞ্চে বরিশাল থেকে ঢাকা আসার সময় মোশাররফ করিমের একটা নাটক খুুব মনোযোগ দিয়ে দেখেছিলাম। নূরে আলম। জ্যোতিষী এই নূরে আলমের হাত দেখে বলেছিল, সামনের জৈষ্ঠ্য মাসের এক তারিখ তার সাথে সময়ের ব্যস্ততম অভিনেত্রী নায়িকা অপি করিমের বিয়ে হবে। সে জাস্ট অপি করিমকে গিয়ে বললেই হবে, "হে অপি করিম আমি তোমার হবু স্বামী নূরে আলম তোমাকে বিয়ে করার জন্য চলে আসছি।" অপি করিম তাতেই রাজি হয়ে যাবে।
বেচারা নূরে আলমের সাদা মনে কাদা নাই। প্রথমে সিনেমা হলে গেলেন। সেখানকার লোকজন বললেন, অপি করিম এফডিসিতে থাকেন। এলেন এফডিসি। তাকে দাড়োয়ার ঢুকতেই দিচ্ছে না। বহু কষ্টে অপি করিমের বাসার ঠিকানা খুঁজে বাসায় এলেন হাতে ফুলের তোড়া আর গিফট নিয়ে। তার সরল বিশ্বাসে কেনা সে ফুলের তোড়া দাড়োয়ার ছুঁড়ে ফেলে দিলেন রাস্তায়।

নূরে আলম নাছোড়বান্দা। জ্যোতিষী বলেছে মানে এটা সত্যি। অপি করিমের বাসার সামনে ব্যানার টানিয়ে সেখানে লিখে রাখলেন, ‘অপি করিম, আমি নূরে আলম তোমার স্বামী। তোমাকে বিয়ে করার জন্য চলে এসেছি। সে ব্যানারও ভস্ম হয়ে গেল দিয়াশলাইয়ের আগুনে। পুলিশ দুবার অ্যারেস্ট করে নিল তবুও কাজ হল না। সবাই মোটামুটি ভেবে নিয়েছে সে পাগল।

তারপর অপি করিমের বাসার সামনে অনশন শুরু করলেন। বৃষ্টিও তাকে বাসার গেটের সামনে থেকে সরাতে পারে নি। অবশেষে অপি করিমের মনে হল তারসাথে কথা বলা দরকার। তাকে ভেতরে ডাকলেন। তিনি যে বিবাহিত এবং জ্যোতিষী যে তাকে মিথ্যে বলেছে এটা বুঝিয়ে বললেন নূরে আলমকে। বিশ্বাসের ব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়া নূরে আলম কাঁদো কাঁদো চোখে বাসা থেকে আনা রুমালে প্যাঁচানো আংটিটা বের করে অপির হাতে দিয়ে প্রস্থান করলেন।

নূরে আলমের এই আবেগ, এতো অনুভূতি কিছুই তাকে স্পর্শ করতে পারে নি। কেবল সেই নূরে আলমের মৃত্যু সংবাদ অপি করিমকে ছুৃঁতে পেরেছে। তার মনে হয়েছে তিনি অপরাধী। তবে কি স্রেফ ভালোবেসেই কাউকে আপরাধী করা যায়?

আমাদের হয়তো কোনো জ্যোতিষী না বলে দিলেও সবার জীবনেই বোধহয় একজন অপি করিম থাকে যাকে পাওয়ার জন্য আমরা মরিয়া হয়ে উঠি। পৃথিবীর সব নিয়মকে উপেক্ষা করে আমাদের ভেতরের নূরে আলম নাছোড়বান্দা হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের জীবনটা ক্যামেরার সামনে রোল করা ফিল্ম নয়, তাই আমরা চাইলেও অনেক কিছু করতে পারি না। কেবল নীরবে ভালোবাসার মানুষটাকে ভেতরে ধারণ করতে পারি। এটাই বা কম কী!

- রাজীব নন্দী
৪-৭-২০১৮

Saturday, May 26, 2018

একটি নিগূঢ় দাম্পত্য কলহ

উপন্যাসটিতে একটি কথা বারবার বলা হয়েছে তা হল, মানুষ তার নিজেকেই সবচয়ে কম চেনে। উপন্যাস শেষ করার পর যথন থ হয়ে রইলাম তখন আমার কেবল মনে হল, পুরষ নারীকে সবচেয়ে কম চেনে কখনো কখনো চিনতেই পারে না। পৃথিবীর সব রহস্যের প্যাঁচ হয়ত একদিন খুলে যেতে পারে, কিন্তু নারী মনের রহস্য পুরুষ কখনো জানতে পারবে না। পুরোটা জীবন শরীরের প্রতিটা কোষের অধিকার দিলেও বেলাশেষে চোখের কোনের কালো বিন্দুটা অপরিচিতই থেকে যায়। তবে কি সত্যি নারীকে চেনা সম্ভব নয়! আবার পুরুষ এদের প্রেমে পড়ে যতই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাই বলুক না কেন এদের আসল কথাটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। অন্যদিকে পুরুষ নারীর সব পরিবর্তন ঠিকঠাক বুঝতে বরাবরই ব্যর্থ হয়।

শৈবাল উপন্যাসের নায়ক। কামুক পুরুষ। মাতাল যেমন রোজ মদ না খেলে থাকতে পারে না, তার দেহের ক্ষুধাটাও যেন অনেকটা সেরকমের। দেহকে ছাপিয়ে স্ত্রী শিখার মনের চৌকাঠ পেরুতে পারেন নি। নিজের বাবা হওয়ার অযোগ্যতার কথা স্ত্রীর কাছে গোপন করার ফল যে স্ত্রী বিয়োগের কষ্ট হয়ে ফিরে আসবে সেটা সে বুঝতে পারেন নি। যখন বুঝতে পেরেছিলেন তখন হয়ত বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল। তবে কি দাম্পত্য জীবনের সব সমস্যা খোলাখুলি বলে দেয়াই উচিত?

নারী রহস্যময় হলেও অকপটে মনের সব কথা বের করে দিতেও অসুবিধা হয় না সেটা প্রমাণ পাওয়া যায় শিখা যখন নিজ থেকেই মামা উমেশের সাথে ঘটনাচক্রে শারিরীক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সেটার সরল স্বীকারোক্তির মাধ্যমে। মা হওয়ার অদম্য বাসনা নিয়ে হয়ত বেঁচে থাকে প্রত্যেক নারী। কিন্তু সে সন্তান ভালোবাসার ফসল হওয়া চাই। শৈবাল যখন সবকিছূ মেনে নিয়ে উমেশের ছেলেকেই নিজের ছেলে বলে মেনে নিতে চেয়েছিল তখন শিখা বলেছিল, এ সন্তান রজতদার হলেও আমি মেনে নিতে পারতাম কিন্তু এ যে উমেশের রক্ত। রজতদা শিখার বাল্যকাল থেকেই পরিচিত। দুজন দুজনকে ভালোবাসতো কিন্তু মুখ ফুটে বলার আগেই মাঝখান দিয়ে শৈবাল এসে শিখাকে তুলে নিয়ে আসল। তাতে কি মনে মনে ভালোবাসাটা তো রয়ে গেছে। মুখে যতই ভদ্রতার স্পিচ ফুটাই না কেন মানুষ মাত্রই যে আমরা দ্বিচারী সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মাঝেমধ্যে অবিবাহিত কলেজ অধ্যাপক রজত শিখার বাড়িতে এসে জানান দিয়ে যেত কাউকে না পেলেও আজীবন ভালোবাসা যায়। বিয়েটাই ভালোবাসার সফল পরিণতি নয় বরংচ এটা বিশ্বাস করাটা হল স্বৈরাচারীতা।

কেউ যখন নিজের সমস্ত পাপের কথা অকপটে স্বীকার করে নেয় তখন তাকে ক্ষমা বই শাস্তি দেয়া যায় না, সে আপনা আপনিই শাস্তি পায়। শিখাও নিজের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সেটাই করলো। একটি গর্ভপাত শরীর হয়ত শরীরকে বিশুদ্ধ করে দিতে পারে কিন্ত মনের অশুদ্ধতার হাত থেকে রেহাই দেয় না। সেটা ভেবেই কি বিয়ের আট বছর পর এ সিদ্ধান্ত! 

উপন্যাস: জবাব
লেখক: সমরেশ বসু


২৬.০৫.২০১৮

Tuesday, May 22, 2018

বানিজ্য মেলায় যেসব স্টোর থাকা জরুরি

fvBevwR †÷vit
†ZjevwRi ‡¯úwmwdK fvm©b nj fvBevwR| GLv‡b cvIqv hv‡e D`xqvb †bZv‡`i cÖksmv Kivi KviY Lyuy‡R bv ‡c‡jI Kxfv‡e cÖksmv Ki‡Z nq| fvB‡qi ‡cÖvdvBj wcKPvi †_‡K ïiæ K‡i fzj evbv‡b †jLv ÷v¨vUvmI †kqvi †`qvi Av`k© wbqgKvbyb| fvB Pvu`vevwR wKsev A¯¿nv‡Z cwÎKvi †nWjvBb n‡jI Kxfv‡e AvuZwkKvP w`‡q Lyu‡R †mUvi cwRwUf w`K ‡ei Ki‡Z n‡e Zv cvIqv hv‡e GB †÷v‡i| wb‡R KzKz‡ii †ND †ND ïb‡jB f‡q jyw½ †i‡L cvjv‡jI fvB‡qi Rb¨ †h Rxeb w`‡Z m`v cÖ¯‘Z Av‡Qb Zv ivRbxwZi fvlvq Kxfv‡e my›`i K‡i wjL‡eb ‡m ‡KŠkj GLv‡b †kLv‡bv n‡e myjf gy‡j¨| wg_¨v‡K ˆkwíK fvlvq Kxfv‡e mZ¨ ej‡eb fvB‡qi Mjvq Mjv wgwj‡q †mmeI cvIqv hv‡e GLv‡b| GB ‡÷v‡ii †køvMvb n‡e, Ômemgq cv‡k AvwQ fvBÕ|

‡eªKAvc †÷vit
K_vq Av‡Q, ÔNywg‡q Av‡Q mKj †eªK Avc me †cÖ‡giB AšÍ‡i|Õ b`xi K~j Avi †cÖg †h‡Kvb mgq †f‡½ †h‡Z cv‡i| Z‡e GB †eªK Av‡ciI wKQz wbqgKvbyb _vKv DwPZ| GKUv wjwLZ WKz‡g›U _vKv DwPZ bq‡Zv wKQzw`b ci †cÖwgK wKsev ‡cÖwgKv hw` wd‡i G‡m e‡j †h bvn Avgv‡`i †eªK Avc nq wb ZLb cÖgvY¯^iƒc GB WKy‡g›U Avcbv‡K mvnvh¨ Ki‡e| ZvQvov †eªK Avc n‡j †cÖwgK-†cÖwgKv ci¯ú‡ii bv‡g ‡`vlv‡ivc ïiæ K‡i hv G‡Kev‡iB AbywPZ| KLb †eªK Avc Ki‡j ‡mUv `xN©¯’vqx Ges myLKi n‡e, †Kvb gvm †eªK Av‡ci Rb¨ Dc‡hvMx, wZw_, ivwk, bÿÎ Gme †`‡L †eªK Avc †Kb Ki‡eb  GiKg nvRv‡iv ‡KŠkj cvIqv hv‡e GB †÷v‡i|

‡dmeyK wm‡j‡eªwU nvDRt
cvovi †gv‡o †gv‡o U‡Oi †`vKv‡bi g‡Zv GLb †dmey‡Ki Avbv‡P Kvbv‡PI †dmeyK wm‡j‡eªwU‡`i e¨vcK Dcw¯’wZ †`Lv hvq| bZzb †dmeyKviiv Zv †`‡L eyK dzwj‡q ‡dmeyK wm‡j‡eªwU nIqvi ¯^cœ †`‡L| Z‡e †dmeyK wm‡jweªwU †Zv Avi cÖkœdvu‡mi g‡Zv †mvRv KvR bq †h PvB‡jB d‡UvKwci †`vKvb †_‡K wK‡b Avb‡e| †mRb¨ wKQz †m‡µU Kjv‡KŠkj Rvbv Riæwi| Kxfv‡e weZwK©Z †cv÷ w`‡q UvBgjvB‡b Avm‡Z nq, Kvi †g‡mR wmb K‡i †i‡L ‡`‡e Avi Kv‡K Ô†cvKÕ w`‡Z n‡e, Kxfv‡e Ávbx UvBc K‡g›U Ki‡Z nq Gme ‡KŠkj cvIhv hv‡e GB †÷v‡i| my›`ix‡`i Bbe‡· cÖ_‡g Kx wj‡L Zvi g‡bv‡hvM AvKl©Y Ki‡Z nq, Ae‡k‡l ¯ŒxbkU †K‡jsKvwi‡Z †du‡m †M‡j †mLvb †_‡K Kxfv‡e ‡KŠk‡j d‡jvqvi evwo‡q wd‡i Avm‡e ZvI †kLv‡bv n‡e GB ‡dmeyK wm‡j‡eªwU nvD‡R|


‡gvwUfkbvj w¯úP Kbv©it
gv‡Qi evRvi †_‡K kv‡Ki evRvi AvRKvj meLv‡bB †gvwU‡fkbvj w¯úKvi‡`i RqRqKvi| GKRb wfÿzKI my‡hvM †c‡j Avcbv‡K †gvwU‡fkbvj w¯úP ïwb‡q hv‡e| ZvB †gvwU‡fkbvj w¯úKvi n‡Z cv‡i Avcbvi †ckv| nvZ cv bv _vK‡jI Kxfv‡e ‡Kej g‡bve‡ji Dci fi K‡iB WªvBwfs Ki‡eb, ¯§vU©‡dvb bv _vK‡jI Kxfv‡e ‡Kej B”Qvkw³i e‡j cy‡iv c„w_ex Avcbvi nv‡Zi gy‡Vvq ivL‡eb, cov‡kvbv bv K‡iI †Kej AvZ¥wek¦vm †i‡LB me cixÿvq mdjZvi mv‡_ cvk K‡i Avm‡eb, ‡cÖwgKvi Ab¨Î we‡q n‡q †M‡jI †Kej fv‡jvevmvi †Rv‡i †cÖwgKvi ev”Pvi evev n‡eb Zv K‡qKRb AwfÁ †gvwU‡fkbvj w¯úKvi Øviv †kLv‡bv n‡e| AZtci ivZvivwZ AvcwbI n‡q †h‡Z cv‡ib ‡`‡ki bvgKiv GKRb †gvwU‡fkbvj w¯úKvi|

BDwUDevi c¨v‡jmt
BDwUDwes K‡i ‡Kej wK¬K Avi wfD‡qi Dci fi K‡i ÷vi n‡q hv‡”Q mg‡qi cwikÖgx wµ‡qwUf †Q‡jiv| evwoi Qv‡`i dz‡ji Ue †_‡K ïiæ K‡i ev_iæ‡gi ev_Ue meB AvRKvj wfwWI GwWwUs K‡i BDwUD‡e Avc‡jvW n‡q hv‡”Q| ZvB ÷vi n‡Z n‡j BDwUDe GLb me‡P‡q fv‡jv gva¨g| GB BDwUDe nvDR Avcbv‡K †kLv‡e Kxfv‡e wb‡R iv¯Ívi cv‡k g~Î wemR©b Ki‡jI †mme wfwWI bv K‡i A‡b¨i g~ÎwemR©b `„k¨ wfwWI K‡i mgvR cwieZ©‡bi ‡køvMvb w`‡eb| Kxfv‡e A‡b¨i wfwWI wb‡Ri bv‡g KwcivBU K‡i wb‡eb| iv¯Ívi cv‡k gvivgvwii `„k¨ wKsev †ivW GKwm‡W‡›U AvnZ gvbyl‡K wfwWI K‡i Kx K¨vckb wjL‡j e„wói g‡Zv K‡i jvBK K‡g›U co‡e Zvi †Mvcbxq †KŠkj †kLv‡bv n‡e GB BDwUDe nvD‡R|

Wednesday, May 16, 2018

যৌতুক

আজ এক কাকার সাথে কথা বলতেছিলাম। তার মেয়ের বিয়েতে তিনি কী কী যৌতুক দিবেন সেসব বলতেছিল। সবকিছুর পর ছেলে নাকি খুব আবদার করে বলছে, তাকে একটা মোটর সাইকেল দিতেই হবে। হা হা হা..
.
আমি একটু নাক ছিটকে বললাম, এসব কেমন কথা। আমি তো আমার বিয়েতে কোনো যৌতুক নেব না। কাকাজী এইবার বুক ফুলিয়ে বললেন, এইতো বাপের বেটার মতো কাজ করবি।
.
আগে সমাজে অশিক্ষা, অনেক কুসংস্কার ছিল যে সমাজ মেয়েদের খাটো করে দেখতো। কিন্তু এই 2018 সালে এসেও যৌতুক নেওয়াটা মানতে কষ্ট হয়।
.
যৌতুক নিয়ে যারা বিয়ে করে এদের কাছে বিয়েটাকে কেবল বিয়েই মনে হয়। এটা তো একটা সম্পর্ক। টাকা-পয়সা নিয়ে ডিল করে তো ব্যবসা হয় আত্মীয়তাও হয় নাকি? বিষয়টা এমন যে, তোমাদের সাথে আমাদের আত্মীয়তা হবে যদি তোমরা আমাদের এতো টাকা আর এতোগুলো জিনিস দাও। ডাকাতরা তো রাতের বেলা ডাকাতি করে আর এই যৌতুকের বিয়েতে দিনেদুপুরে ভদ্রলোক সেজে ডাকাতি হয়। এদের নিজেদের আত্মসম্মান সম্পর্কে নিজেদেরই ধারণা থাকে না। নিজের হবু শ্বশুরের কাছে, হবু বেয়াইর কাছে, হবু বেয়াইনের কাছে আত্মসম্মান কখন বিক্রি করে ফেলে নিজেরাই টের পায় না।
.
যৌতুক নিয়ে বিয়ে করার পর যে পুরুষ নিজের স্ত্রীর কপোলে হাত রেখে বলবে, 'আমি তোমাকে ভালোবাসি'; তার মত পিউর স্বঘোষিত ভণ্ড আর দ্বিতীয়টা নাই।

লিটনের ফ্ল্যাট

প্রেমিক আর চোরের মাঝে বড্ড মিল আছে। দুজনকেই পরিবারের চোখ ফাঁকি দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হয়। ঘরে থাকলে একদমই আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ডটার সাথে কথা বলতে পারি না। ফিসফিস করে আর কতক্ষণ কথা বলা যায়। তাই বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছি....
- বেইবি, আমরা কোথায় হানিমুন করবো জানো?
- কোথায় বাবু?
- পাতায়া।
- পাতায়? পাতায় কেন? গাছতলায় লতাপাতা কুড়িয়ে সেখানে হানিমুন?
- আরেহ, পাতায় নয় পাগলী, পাতায়া বীচ, থাইল্যান্ড।
- উমা, সত্যি?
- থ্রিপল সত্যি।
- তাহলে চলো কালই বিয়ে করি এবং এক সপ্তাহ পর থাইল্যান্ড চলে যাই।
- শোনো, একটু…

বলতেই হঠাৎ পেছন থেকে খোঁচা মেরে একজন জিজ্ঞেস করতে লাগল,
- ভাই লিটনের ফ্ল্যাট-টা কোনদিকে?
প্রশ্ন শুননেই লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম। কি ব্যাপার, লিটনের ফ্ল্যাটে এভাবে কেউ ঢোল বাজিয়ে যায় নাকি! নাহ, লোকটা তার অবস্থানে অনড়, একটুও হাসলো না। আমি আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। লোকটা একাই। উনি একা একা লিটনের ফ্লাটে গিয়ে কী করবে। জীবনে কাউকে একা লিটনের ফ্ল্যাটে যেতে শুনিনি।
এ পরিস্থিতিতে মুচকি না হাসলে কথা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হবে। ফোনটা রেখে হাসি হাসি মুখে বললাম,
- সাথের জন কই? পরে আসবে?
- কে ভাই? আমি তো একাই আসছি।
কি বাজে ব্যাপার। তবে কি লোকটা আমি যে লিটনের ফ্ল্যাটের গল্প জানি সেটাও জানে না, নাকি সত্যি সত্যি এ পাড়ায় লিটন নামের কেউ আছে যিনি ফ্ল্যাট ভাড়া দেন।
বললাম, আপনাকে কে দিল এই লিটনের ফ্ল্যাটের ঠিকানা?
লোকটি বলল, ভাইয়া আমি নতুন আসছি এই শহরে। কয়েকদিন যাবত বাসা খুঁজতেছি। তো ওখাানে দেখলাম লেখা 'ফ্ল্যাট ভাড়া হবে' নিচে নাম লেখা 'লিটন' । ফোন করলাম বন্ধ পাচ্ছি। তাই সামনে এসে আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম।

গল্প - লিটনের ফ্ল্যাট।

প্রশ্নফাঁস ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকালের পরীক্ষা

একদিন পত্রিকার লিড নিউজ হল....

"প্রশ্নফাঁস ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকালের পরীক্ষা""

পত্রিকার লিড নিউজ দেখে সবার তো চোখ ছানাবড়া। OMG এটা কীভাবে সম্ভব। ফেসবুক, টুইটার চারদিকে আলোচনার ঝড় উঠে গেল। আমাদের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কী তবে ঘোড়ার ঘাস কাটে নাকি ফোনে লুডুস্টার খেলে। এতোদিনে রেকর্ড ব্রেক করে কীভাবে প্রশ্নফাঁ ছাড়া পরীক্ষা হল! এবার তো গিনেস বুকে নাম উঠতে যাচ্ছে তবে। বিসিএসে নতুন প্রশ্ন সংযোগ হবে, "কত তারিখে প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা হয়েছে?"
এইতো কিছুদিন আগে শিক্ষামন্ত্রী ভালোয় ভালোয় 'ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড 2017' পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন। সবাই কি সুন্দর পুত পুত করে অভিনন্দন জানালেন। তবে কি পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেবে কমিটি! এটা নিয়েই জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ সেই পুরস্কার প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য জোরালো দাবি তুললো। নাহ, এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী এই পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য না কিছুতেই। পরীক্ষা পদ্ধতিতে একটা ধারা চালু ছিল। সেটা তিনি ধরে রাখতে পারেন নি। এটা তার ব্যর্থতা।
লেখকরা বড় বড় কলাম লিখতে শুরু করলো। সারাদেশের সম্মানিত শিক্ষক সমাজ শাহবাগে এসে আমরণ অনশন করতে লাগলো। প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা হু, ছেলের হাতের মোয়া পাইছে নাকি! ব্যানারে ব্যানারে শ্লোগান, "প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা মানি না, আমরা কিছু জানি না।" কেউ প্লেকার্ডে লিখে আনছে, প্রশ্নফাঁস ছাড়া প্রহসনের পরীক্ষা, শিক্ষামন্ত্রী মুড়ি খা।" একজন নামজাদা লেখক 'তোরা ঢাকার শহর রক্তে ভাসাইলি' নামানুসারে বই লিখলো 'তোরা ঢাকার শহর প্রশ্নে ভাসাই দে'। যত যা হোক প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা জাতির বিবেক হয়ে শিক্ষকসমাজ কীভাবে মেনে নেবে হু।
শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে ডাকলেন। এক সাংবাদিক মুখের উপর প্রশ্ন ছুড়ে মারলেন, "আপনার আমলে প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা হল আপনি এটার কি ব্যাখ্যা দিবেন।" মাননীয় মন্ত্রী বসুন্ধরা টিস্যুতে ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, "দেখুন, আমি ঘুমে থাকি, আমার খবর থাকে না।" তারপর মুখ ফসকে বলে ফেললেন, সত্যি বলতে আমি নিজেও অবাক, কীভাবে হল এই ভুলটা। আমি নিজের ভুল স্বীকার করে নিচ্ছি এবং আজই এই ব্যর্থতার জন্য পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু পদত্যাগ পত্র লেখার কাগজ খুঁজে পাচ্ছি না বলে লেখা হয়ে ওঠে নি।"
অতঃপর,
তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিজি প্রেস থেকে শুরু করে পাড়ার ফটোকপির দোকান সব খতিয়ে দেখা হল। ফেসবুক, টুইটার, ইমো, ইনস্টগ্রাম, ট্যাংগো, উই চ্যাট সব চেক আপ করা হল, না কোথাও প্রমাণ মিলল না। ফেসবুকে যে পেইজে ফোন নাম্বার দিয়ে প্রশ্ন বিক্রি করে ওদের পেইজে গিয়ে দেখা গেল স্ট্যাটাস দিয়ে রাখছে, ফিলিং স্যাড।
তবে কি সত্যি সত্যি হয়েছে, আসলেই হয়েছে?.. কী? প্রশ্নফাঁস ছাড়া পরীক্ষা।

©রাজীব নন্দী

নিষিদ্ধ দ্বিপদী'র প্রচারণা

হম।
স্টল নং 159
পাওয়া যাবে।
নাহ, আগেরটাই।
ইনবক্সে চার- পাঁচ(শ) জনকে এসব উত্তর দিতে দিতে কিবোর্ড হ্যাং হয়ে গেছে। তাই বন্ধুর কিবোর্ড ধার করে এই পোস্টটা লিখলাম। ওহ, বলছিলাম আমার প্রথম বই 'নিষিদ্ধ দ্বিপদী'র কথা। যাদের গতবছর মহাব্যস্ততায় কেটেছে, বাসায় থাকলেও 'নিষিদ্ধ দ্বিপদী' পড়ার জন্য মন পড়ে ছিল বইমেলায়, 'নিষিদ্ধ দ্বিপদী' ছাড়া যারা বইয়ের সেল্ফ অপূর্ণ মনে করছেন কিংবা দেখি এতোএতো নাম শুনেছি কোন ছাইপাঁশ লিখছে দেখি, পড়ে একটা নেগেটিভ রিভিউ দিয়ে ওনার এই তোড়জোড় ছুটিয়ে দিচ্ছি, এরকমটা ভাবছেন। তাদের জন্য বলছি, গতবছরের মতো 'নিষিদ্ধ দ্বিপদী' এবারও শোভা পাচ্ছে বইমেলার পুরোটা জুড়ে।
কীভাবে আসবেনঃ
দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে রাজধানী ঢাকায় চলে আসুন। তারপর যেকোন অন্ধ, বোবা লোককে জিজ্ঞেস করুন, '"অ্যাঁ মিয়া ভাই, বইমেলা কোথায় হচ্ছে, কীভাবে যাবো।” সে আপনাকে পথ বাতলে দেবে।
যাদের শিডিউল মাসের প্রথমেই করা শেষ তাই কোনোভাবেই আসতে পারবেন না, তাদের জন্য রয়েছে হোম ডেলিভারি সিস্টেম। আর সিস্টেম পরিচালনার দায়িত্বে আছেন Rijvi Ahmed Jibran ভাই। জাস্ট ইনবক্সে হিম।
মেলায় কোন ব্যাগ নিয়ে ঢুকবার দরকার নেই। প্রকাশক সোহানুর রহিম শাওন ভাই বলছে, যত কপি 'নিষিদ্ধ দ্বিপদী' ততকপি ব্যাগ ফ্রি। তাই বই কীভাবে নিবেন সেটার চিন্তা শাওন ভাইয়ের উপর ছেড়ে দিন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকেই 159 নাম্বার স্টলের যেকোন একজনকে জিজ্ঞেস করুন যে, "ভাই শুনেছি পরিবার প্রকাশনীতে রাজীব নন্দীর 'নিষিদ্ধ দ্বিপদী' পাওয়া যায়, সেটা কোন দিকে?" সে আপনাকে সুন্দরভাবে পথ দেখিয়ে দেবে।
অফারঃ
প্রতিদিন মেলায় প্রথম পাঁচজন নিষিদ্ধ দ্বিপদী ক্রেতা পাবেন এক পিস চিনি দিয়ে বানানো মিষ্টি। এটা শাওন ভাইয়ের পক্ষ থেকে। তাই বই কেনার সময় জিজ্ঞেস করবেন, আপনি কত নাম্বার। যদিও ওরা সবসময়ই ছয় থেকেই গোণা শুরু করে।
সতর্কবাণীঃ
'নিষিদ্ধ দ্বিপদী'কে নকল করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী তাদের মানিব্যাগ ফুলাচ্ছে, সুইস ব্যাংকে টাকা জমাচ্ছে সেই সাথে গুলশানে ফ্ল্যাট কিনতেছে। তাই কেনার সময় কমেন্টে দেয়া বইয়ের কভার ও পরিবার প্রকাশনীর মনোগ্রাম দেখে আসল বই কিনুন।
ধন্যবাদ।
বই পড়ুন। আর লেখকের সমালোচনা করুন।
ভালোবাসা অফুরান।

আস্থা রাখো ভালোবাসায়

বরং শান্ত হও, আস্থা রাখো ভালোবাসায়
বরং কষ্ট পেয়ে পেয়ে নিখাদ হোক তোমার ভালোবাসা,
বরং ধৈর্য ধরো, অনড় থাকো ভালোবাসায়।
অন্তত যাই করো নিজের ভালোবাসাকে হারাতে দিও না
কেননা, দু মণ অন্ন দানা, একটি হিরের গহনা তুমি কিনে আনতে পারো সময়ের ব্যবধানে কিন্তু পৃথিবীতে ভালোবাসা বিক্রির কোন স্টল নেই।
যারা কষ্ট পেয়ে ভালোবাসাকে ভুলে যায় তারা আর যাই হোক ভালোবাসতে পারে না।

প্রশ্নফাঁস রোধ বিষয়ক প্রস্তাব

~ দেশে বিবাহ পদ্ধতি বন্ধ করে দিতে পারে। কারণ বিয়ে মানেই সন্তান, সন্তান মানেই পড়াশোনা আর পড়াশোনা মানেই প্রশ্নফাঁস।

~ পরীক্ষার এক মাস লাগাতার লোডশেডিং দিতে পারে। নো বিদ্যুৎ, নো মোবাইলে চার্জ, নো ফেবু হোয়াচ্চাপ, নো প্রশ্নফাঁস।

~ প্রতিবছর বইমেলায় "প্রশ্নফাঁস সমগ্র" নামে একখানা বেস্ট সেলার বই প্রকাশ করতে পারে যাতে পুরো বছরের প্রশ্ন দেয়া থাকবে। ছেলেমেয়েরা কষ্ট করে ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি করতে হবে না, আর ফা়ঁস হওয়া প্রশ্নকে আবার মিডিয়া প্রশ্নফাঁস বলে প্রচার করতে পারবে না।

~ পরীক্ষার আগের রাতে সবাই ইনবক্সে প্রশ্ন দিয়ে বলে দিতে পারে, "এটা 21 জনকে শেয়ার করে জানিয়ে দিন, ইগনোর করবেন না। একজন ইগনোর করেছিল পরে তাকে শিক্ষামন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দিয়েছিল সবাই।" তাই আসল প্রশ্নকে নকল ভেবে সবাই ইগনোর করবে।

~ পরীক্ষার কোন রুটিন থাকবে না। শিক্ষার্থীরা হলে ঢুকেই বুঝতে পারবে কোন সাবজেক্টের পরীক্ষা। যারা মেধাবী তারা পড়লেও পারবে, না পড়লেও পারবে। অকা।

~ শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষার এক মাসের জন্য পদত্যাগ করে ঘানা কিংবা ত্রিনিদাদ ঘুরতে যেতে পারে। তারপর প্রশ্নফাঁস হোক, কিংবা কারো ভিডিও ফাঁস হোক কোনো কিছুর দায়ভারই তাকে নিতে হবে না। তারপর রেজাল্ট দেয়ার সময় হাসিমুখে প্রেস কনফারেন্সে দেশের শিক্ষার উন্নতি নিয়ে দুগাল বক্তব্য দেবে, কেচ্ছা খতম।

© রাজীব নন্দী

কখনো তুমুলভাবে কারো প্রেমে পড়বো ভাবি নি

কখনো তুমুলভাবে কারো প্রেমে পড়বো ভাবি নি। শ্রাবণের বিষন্ন সন্ধ্যায়ও আমার মন ভালো হয়ে যায় কেবল কারো কথা ভেবে ভেবে, কি ম্যাজিকাল ব্যাপার! বহুদিন জমে থাকা মেঘ যেভাবে ছুটে আসতে চায় বিপুলা পৃথিবীতে আমারও বহুকাল জমে থাকা প্রেম উদ্বেল হয়ে ছুটে যেতে চাইতো। আষাঢ়ের তুমুল বর্ষণে কিংবা তীব্র শীতে জমে যেতে যেতেও আমি তাকে চাইতাম। প্রচণ্ড রকমের ভালোবাসা যাকে বলে।
পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে আমি ওকে ভালোবাসতাম, দুপুরের বুয়ার হাতের অখাদ্য রান্না খেয়ে রাগের মাথায় আমি ওকে ভালোবাসতাম, রাতের নির্জনতার শুকনো পাতার ঝরে পড়ার শব্দে যখন ভয়ে হৃদ কম্পন বেড়ে যেত আমি তখন ওকে ভালোবাসতাম। বৃষ্টিতে একা ছাতার নিচে হাঁটতে হাঁটতে আমি ওকে ভালোবাসতাম, জ্যামে বসে বসে বিরক্ত হয়ে আমি ওকে ভালোবাসতাম, ওকে ভালোবাসতাম কোন অশুভ সকাল কিংবা একাকি সন্ধ্যায়।
তবে আমার ভালোবাসা কখনো তাকে স্পর্শ করতে পারে নি। কোনো এক অদৃশ্য দেয়াল আমাদের এক জনমের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমি তা আজও আঁচ করতে পারি নি।

সবখানে কোটা পদ্ধতি

কোটা পদ্ধতি যদি থাকবেই তো কেবল চাকরির ক্ষেত্রে কেন? দেশের সকল ক্ষেত্রেই কোটা থাকা উচিত। তবে অন্য ক্ষেত্রে কোটা থাকলে তার সুবিধা কেমন হতো দেখি...
এক.
আংকেল এই বাড়ির ভাড়া কত?
- দশ হাজার। তো ব্যাচেলর না ফ্যামিলি?
ব্যাচেলর।
- তাহলে ভাগেন।
এই দেখেন, আমার কোটা আছে।
- আহা, বাবা আগে বলবা তো। ভিতরে আসো। ঠিকাছে তোমার জন্য সাত হাজার।

দুই.
মামা, বেগুন পাঁচ টাকা কম রাখো।
- নাহ মামা, মালের দাম বাড়তি।
এই দেখো, আমার কোটা আছে।
- আহা, মামা আগে বলবেন তো। ঠিকাছে দুই টাকা কম দেন।
তিন.
আংকেল, আমি আপনার মেয়ে জুলিয়াকে ভালোবাসি।
- তোমার এতো বড় স্পর্ধা, বামন হয়ে চাঁদের দিকে হাত বাড়ালে। কী আছে তোমার?
আমি পিউর বেকার।
- বের হও এখান থেকে। গেট আউট।
কিন্তু আমার একটা কোটা আছে।
- আহা, বাবাজি আগে বলবা তো। কই রে জুলিয়া দেখ জামাই এসেছে।
চার.
....পাবলিক টয়লেটের লম্বা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে..
মামা, আমার খুব ইমার্জেন্সি অবস্থা। আগে দেয়া যায় না?
- নাহ মামা, সিরিয়াল ব্রেক করা যাবে না।
এই দেখো মামা, আমার কোটা আছে।
- আহা, আগে বলবেন তো। এই কে আছেন ভিতরে তাড়াতাড়ি বের হোন।
পাঁচ.
...খেলার মাঠে..
বল নিয়ে পরপর তিনবার গোলপোস্টে কিক করেও গোল করতে পারলো না জনাব স্ট্রাইকার । তার একমাত্র কারণ গোলকিপার। চতুর্থবার বল নিয়ে গোলপোস্টের সামনে গিয়েই বললো, ভাই আমার কোটা আছে তাই এই গোসলটা অন্তত দিতে দে। এটা শুনেই গোলকিপার গোলপোস্ট ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। অবশেষে কোটায় একটি গোল করতে পারলেন জনাব স্ট্রাইকার।

© রাজীব নন্দী

একাকিত্বের গান কিংবা নির্বাসন

ফার্মগেটের ব্যস্ত ফুটওভারব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে যে লোকটা ভিক্ষে করে; চারপাশে কোলাহল আর ব্যস্ততা কি তাকে ছুঁতে পারে?
বিয়ের রাতে যে কন্যার বাপ কপাল কুঁচকে ভাবে- এতগুলো যৌতুকের টাকা আমি কিভাবে পরিশোধ করবো; তাকে কি বিয়ে বাড়ির কোনো আনুষ্ঠানিকতা স্পর্শ করতে পারে?
রেজাল্টের আনন্দে যখন কলেজেপাড়া মুখরিত, 'এইবার ফেল করলেই বিয়ে দিয়ে দিবো'- হুমকি শুনে শুনে অভ্যস্ত হওয়া ফেল করা মেয়েটাকে কি সেই আনন্দ ছুঁয়ে যেতে পারে?
প্রেমিকার বিয়ের রাতে যে ছেলেকে বন্ধুরা কনসার্টে ধরে নিয়ে যায় মন ভালো করার জন্য বক্সের তীব্র শব্দদূষণ কোনোভাবেই কি তার কানে প্রবেশ করতে পারে?
মানুষ কখনো কখনো চরম নিঃসঙ্গ। পরীক্ষার হলে দাঁত দিয়ে কলম কামড়ানো পরীক্ষার্থীর মতো নিঃসঙ্গ। গাছের মগডালে উঠে নিচে মই খুঁজে না পাওয়া বাওয়ালির মতো নিঃসঙ্গ। সদ্য প্রেমিকাহারা প্রেমিকের মতো নিঃসঙ্গ। চাদরে জড়িয়ে রাখা বুকের মধ্যিখানে যে হৃদপিণ্ডটা উপেক্ষা সয়ে সয়ে একপাক্ষিক ভালোবাসায় মত্ত সে হৃদপিণ্ডটার মতো নিঃসঙ্গ।
নির্বাসনের জন্য গহীনে অরণ্যে কিংবা কোনো জনমানবহীন দ্বীপে যাওয়ার দরকার হয় না। বিশাল জনাকীর্ণ ময়দানে কিংবা ভরপুর আয়োজনে নিজেকে নিঃসঙ্গ আবিষ্কার করাটাই তো আসল নির্বাসন।

ধর্ষণের সাফাই

অপরাধকে অপরাধ হিসেবে স্বীকার করতে একদল মানুষের বুকের ভিতর চিনচিন করে ব্যথা করে। তাই সরাসরি সেটার সমর্থন না করে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে ইয়ে মানে ইয়ে মানে বলে জাবর কাটতে থাকে।

ধরুণ, একজন মেয়ে ধর্ষিত হলো। তো কেউ একজন চায় না নারীরা স্বাধীনভাবে সবসময় ঘুরে বেড়াক, স্বাধীনভাবে পোশাক পড়ুক, স্বাধীনভাবে কথা বলুক। সে সরাসরি এসব না বলে ধর্ষণের পেছনে পোশাকের অজুহাত টানবে, সন্ধ্যার পর একা চলাফেরার অজুহাত টানবে। অথচ মোটা মাথায় এটা কখনো কাজ করবে না যে, রাস্তার পাশে বসে থাকা একটা কুকুরকেও শুধু শুধু আঘাত করার রাইট কারো নাই, সেখানে একজন মেয়ে ধর্ষিত হওয়ার পর তা জায়েজ করার চেষ্টা করা হয়। 

জাফর ইকবাল স্যারের উপর ছুরিকাঘাত হওয়ার পর একদল উল্লাসে ফেটে পড়তেছে, সে আইডিয়া কপি করে সায়েন্স ফিকশন লিখে লেখক হইছে, এইটা কইছে, সেইটা কইছে ব্লা ব্লা ব্লা। টু দ্য পয়েন্টে অপরাধকে অপরাধ হিসেবে স্বীকার না করে উল্টো পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ইন টাইমে।

এরা কারা?
ডানে বামে চোখ নাক কান খোলা রেখে তাকালেই এদের চিনতে পারবেন।

Tuesday, May 15, 2018

আফিমখোর কমলাকান্ত যখন ভাইভা বোর্ডে

প্রশ্নকর্তা: আপনার নাম?
কমলাকান্ত : কোন নামখানা বলিব? পিতা-মাতা প্রদত্ত নাম নাকি নিজে শখ করিয়া যে নামখানা রাখিয়াছি? নাকি লোকে যে নামে আমায় ডাকিয়া থাকে, তাহা?
প্রশ্নকর্তা: প্রাতিষ্ঠানিক সনদে যে নাম রহিয়াছে তাহাই বলুন।
কমলাকান্ত: সেই নামখানা তো আপনার হস্তে ধরিয়া রাখা জীবনবৃত্তান্তেই রহিয়াছে! আবার নতুন করিয়া বলিবার কী আছে?
প্রশ্নকর্তা: নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।
কমলাকান্ত: নিজের সম্পর্কে তেমন কিছুই পড়িয়া আসি নাই, স্যার। আর কোনো পুস্তকেই আমার সম্পর্কে কিছু লেখা নাই, তো কী করিয়া বলিব!
প্রশ্নকর্তা: কিসের পরীক্ষা দিতে আসিয়াছেন?
কমলাকান্ত: পরীক্ষা যাহাই হোক, প্রশ্ন তো একই হইবে, তাহা জানি। তাই সেটি জানিবার প্রয়োজন বোধ করি নাই।
প্রশ্নকর্তা: সব পরীক্ষায় আপনি গোল্ডেন এ প্লাস লাভ করিয়াছেন। ফাঁস হওয়া প্রশ্ন দেখিয়া পরীক্ষা দেন নাই তো?
কমলাকান্ত: আমি অখ্যাত এক আফিমখোর কমলাকান্ত, সব সময় আফিম সুধা পান করিয়া ঘুমাইয়া থাকি। কীভাবে কী ঘটিয়া যায় কিছুই টের পাই না।
প্রশ্নকর্তা: বলুন তো, উগান্ডার প্রেসিডেন্টের ছোট শ্যালিকার বয়ফ্রেন্ডের নাম কি?
কমলাকান্ত: তাহার সহিত তো কিছুদিন পূর্বেই ব্রেকআপ হইয়াছে বলিয়া শুনিয়াছি। বর্তমানে তিনি সিঙ্গেল রহিয়াছেন।
প্রশ্নকর্তা: আপনার কোনো মামা-চাচা আছে?
কমলাকান্ত: নাহ্, আমার পিতা এবং মাতা তাহাদের পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান।
প্রশ্নকর্তা: কোন দল করেন?
কমলাকান্ত: কী যে বলেন স্যার! আমি সর্বক্ষণ নিরিবিলি থাকিতে পছন্দ করি, কোন্দল করিব কী করিয়া?
প্রশ্নকর্তা: চাকরিটা পাইয়া গেলে কি বেলা বোসকে ফোন করিয়া বলিবেন, "চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো?"
কমলাকান্ত: নাহ্, বেলারা কাহারো ফোনের অপেক্ষায় থাকে না। যে বেলা সকালে থাকে যানজটে বসিয়া বাসায় যাইতে যাইতে সেই বেলার রূপ পাল্টাইয়া বিকেল হইয়া যায়।
প্রশ্নকর্তা: আপনার কোনো কোটা আছে?
কমলাকান্ত: নাহ্, তবে আফিমখোরেরা সমাজে এক প্রকার বঞ্চিত জনগণ। তাহাদের কোটা থাকা উচিত বলিয়া মনে করি।
প্রশ্নকর্তা: আচ্ছা, আপনি আসুন।
কমলাকান্ত: আপনাকে ধন্যবাদ। চাকরি দিবেন না জানিয়াও এতটা সময় নাটক করিবার জন্য।
©রাজীব নন্দী
প্রকাশিত: রসআলো, প্রথম আলো।
৫-৩-২০১৮

অর্থমন্ত্রীর অর্থহীন আলাপ

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, "ছুরি লুকিয়ে রাখা যায় বলে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে রামদা হলে দেখা যেত, আগেই হামলা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হতো।"
~ এহেন বক্তব্য শুনিয়া আমার এমন একখানা কাল্পনিক সংলাপ মনের ভিতর জাগিয়া উঠিল~
হামলাকারী: শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যার, ও স্যার। এই দেখেন ছুরি আপনাকে কোপাইতে আসছি এই ছুরি দিয়ে।
স্যারঃ তুই কীভাবে আসলি এখানে? আমার প্রোটোকশনে পুলিশ আছে জানিস?
হামলাকারীঃ হ জানি, ঐ যে পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল গুতাইতেছে।
স্যারঃ ওরা তোকে দেখে নি এই যে ছুরি নিয়ে আসলি?
হামলাকারী: আমি কি অর্থমন্ত্রীর মতো বুদ্ধি নিয়ে চলি নাকি যে রামদা নিয়ে আসবো আর অপারশেনর আগেই আমায় ধরে ফেলবে। হাউ ফানি ইউ আর স্যার।
স্যার: এই যে পুলিশ ভাইয়েরা, ও আমাকে ছুরি দিয়ে মারতে এসেছে। আমি কি মারতে দিবো নাকি ওকে ধরে ফেলবেন?
পুলিশ: কই দেখি দেখি, ছুরি আনছে নাকি রামদা আনছে আগে চেক করে নেই।
হামলাকারী: আমাকে কি বলদ মনে হয় স্যার, অতবড় রামদা নিয়ে আসবো। এই দেখেন এই যে ছুরি, আমাদের ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র।
পুলিশ: ঠিকাছে, যেহেতু ছুরি নিয়ে আসছিস তাহলে তো পূর্বপ্রস্তুতির দরকার নাই। চারটা কোপ দে তারপর প্রটেকশন দিবো।
হামলাকারী: ঠিকাছে। এক দুই তিন চার।

অভাগা যেখানে যায় সাগর শুকিয়ে যায়

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে যেমন কুমিল্লাতে মূত্র বিসর্জনের বিরতি দেয় তেমনি সেবার ঢাকা থেকে পাবনা যাওয়ার পথে হাটিকামরুল নামক জায়গায় মুত্র বিসর্জনের বিরতি দিল। কয়েকটা বাসের ভরপুর জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়তে লাগলো টয়লেটের দিকে। আমিও গিয়ে দাঁড়ালাম সিরিয়ালে পাঁচটা দরজার তিন নাম্বারটার সামনে। ভেতরে একজন স্রোত বইয়ে দিচ্ছে। দুপাশের টয়লেটে লোকজন ঢুকে ইজিতে কাজ সেরে ঘ্যাচাং করে বের হয়ে অন্যকে সুযোগ দিচ্ছে। কিন্তু আমি যেটার সামনে দাঁড়ালাম সে লোক আর বের হচ্ছে না। বিজ্ঞাপন বিরতিসহ তিনবার খটাস খটাস করে টোকা দিলাম। নাহ, ভবের কোনো খোঁজ খবর নাই কাকুর। মনে হচ্ছে শান্তির কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছেন। শেষমেষ রাগ করে নিজেকে ঐ টয়লেট থেকে প্রত্যাহার করে নিলাম।

দুইটা এটিএম বুথ পাশাপাশি। দুটোরই আলাদা দরজা হয়ে ঢুকতে হয়। তড়িঘড়ি করে যেটায় একজন লাইনে দাঁড়ানো সেখানে গিয়ে ভদ্রলোকের মতো দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণ বাদে আমার সামনের জন ভেতরে প্রবেশ করলেন। বাম পাশের বুথে দুই তিনজন ঢুকে কচকচ করে টাকা নিয়ে বের হয়ে গেল। অার আমি তখনো দাঁড়িয়ে রইলাম। একি রে বাপু, মনে হচ্ছে লোকটা টাকা বের করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাজারের লিস্ট করতেছে কিংবা নোট আলাদা করে জামার কলার, প্যান্টের চিপা পকেটে ঢুকাচ্ছে। নয়তো এতোসময় কি করে ভাইজান আমার!

কথায় আছে অভাগা যেখানে যায় সাগর শুকিয়ে যায়, আর আমি যেখানে যাই সব পেন্ডিং লেগে যায়। কথা হচ্ছে, কিছু কিছু পাবলিকের পাবলিক সেন্স খুবই নিম্মমানের। এরা সব জায়গাকেই নিজের বাসার মতো পার্সোনাল প্রোপার্টিস মনে করে। নিজেদের ভেতরে কোনো তাড়া বা চেতনা অনুভব করে না যে অন্য কেউ অপেক্ষা করতেছে এটা ভেবে। হে খোদা, এরা কী মানুষ নাকি ড্রাগন!

আজকে আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল লটারী

....আজকে আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল লটারীর ড্র হইছে। আমি এগারখানা লটারী কিনছিলাম (ব্যাংকের ক্যাশিয়ার ধরিয়ে দিলেন বলা যায়) যার শেষ তিন ডিজিট ৪৯০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত। তো লটারীতে আমার সিরিয়ালের একটা মাত্র নাম্বার উঠছে যার শেষে ৪৩৫, তাও সর্বশেষ পুরস্কার ১০০০ টাকার জন্য। হিসেব করে দেখলাম ৪০১-৫০০ পর্যন্ত মোট একশটা লটারী কিনলে আমার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। লটারীর দাম হতো ১০০০ আর আমার পুরস্কারের প্রাইজমানি ১০০০ টাকা। চালানে চালান উঠতো। তবুও বিজয়ী তো হইতাম।

প্রিয় হার্টলেস কার্ডিওলজিস্ট

প্রিয় হার্টলেস কার্ডিওলজিস্ট,
তুমি কি জানো আমি এক অষ্টাদশীর প্রেমে পড়েছি? ঠিক বছর খানেক আগে কোনো স্নিগ্ধ বিকেলে। মেয়েটি দেখতে রং তুলিতে প্রলেপমাখা প্রতিমার মতো। ত্রিভুজের শীর্ষবিন্দুুর মতো তীর্যক নাক, প্রজাপতির পাখার মতো কান, চিচিঙ্গার মতো বাহু আর সমুদ্রের মতো ঢেউ খেলানো চুল। মেয়েটা যখন হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে যায় ওর নাকের ডগায় শিশির বিন্দুর মতো ঘাম চিকচিক করে। আমার খুব ইচ্ছে হয় ঐ নাকের শীর্ষবিন্দুতে জমে থাকা শিশির বিন্দুকে আয়না হিসেবে ব্যবহার করি।
আমার কী মনে হয় জানো? আমার মনে হয়, ঈশ্বর কোনো এক অবকাশ যাপনকালে সবকিছু ভুলে নিঁখুতভাবে তৈরি করেছিলো ওকে। প্রতিদিন বিকেলের মিষ্টি আলোয় একটু একটু করে দুধে আলতা প্রলেপ শুকাতেন। ইশ, কত খাটুনিটাই না গেল তাঁর।
আমি কবিদের মতো ওকে সকালের কাঁচা রোদ কিংবা সন্ধ্যার জোনাক পোকার আলোর সাথে তুলনা করছি না। খুবই সাদামাটা অষ্টাদশী ললনাকে ইংরেজিতে ‘ন্যাচারাল বিউটি’ বলা যায়। ওর কানে নেই কোনো দুল, নাকে নেই নাকফুল, ঠোঁটে নেই লিপিস্টিকের প্রস্তর, নখের পৃষ্ঠে নেইলপলিশ লাগানোর মতো আদিখ্যেতাও নেই ওর মাঝে। আর এসবই ওকে সাধারণের মাঝে অসাধারণ করে তুলেছে। ওর কোঁকড়ানো চুলের প্রতিটা সিঁড়ি বেয়ে দিব্যি স্বর্গে চলে যাওয়া যায়। একটা মানুষের হাসি কতটা পবিত্রতা ধারণ করতে পারে সেটা ওর হাসি না দেখলে বোধহয় আমার অজানাই থেকে যেতো।
কেউ একজন বলেছিলো, বিউটি এন্ড ব্রেইন পরস্পর সাংঘর্ষিক। ভাগ্যিস সেই কেউ একজনকে আমি চিনি না, নয়তো সেই অষ্টাদশী ললনার ঠিকানা দিয়ে বলতাম, নিজের ভুল অনুসিদ্ধান্তের জন্য ওর কাছে ক্ষমা চেয়ে আসো বাপু।
কি ভাবছো? এতোসব গালগল্প দিচ্ছি। বিশ্বাস হচ্ছে না? বিশ্বাস তো করার কথাই না। আমরা বেশিরভাগ মানুষই নিজেকে নিজে চিনি না। নিজের চোখের দিকে নিজেকে তাকানোর জন্য ঈশ্বর একটা ব্যবস্থা করে দিয়েছেন আয়না আবিষ্কার করে। বিশ্বাস না হলে আয়নার দেখে নিও সেই ললনাকে। গোপনে, খুব গোপনে কেউ যেন টের না পায়। আয়নাটাও।

ইতি
নিস্তব্ধ জনশূন্য স্টেশনে অপেক্ষমান একজন যাত্রী
#১

আহা প্রেমিকা

গল্পটা শীতের। অলস মানুষ, তাই লিখে শেষ করতে করতে গরম এসে পড়েছে। প্রচণ্ড শীতে শরীর কোনো ডিজে পার্টি ছাড়াই নাচতে শুরু করেছে। ছোট্টবেলায় নাচের স্কুলে দুয়েকটা নাচের মুদ্রা শিখেছিলাম- এ যাত্রায় সেসবও রিহের্সাল হয়ে যাচ্ছে। শীতের পোশাকও যেহেতু শীত আটকাতে পারছে না তাই নাচই বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। দুটি লেপ শরীরে চাপানোর পরও শীত শীত লাগতেছে। পাশের টেবিলে রাখা ল্যাপটপটার দিকে তাকিয়ে ভাবি নামের সঙ্গে লেপ আছে তবুও সেটা গায়ে জড়াতে পারছি না। এতোই শীতের প্রকোপ যে মা ফ্রিজ থেকে মাছ-তরকারি বের করে বাইরে রেখে দিলেন নষ্ট হয়ে যাবে এই আশঙ্কায়। যা হোক, আগামীকাল শুক্রবার। ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে না এটা ভেবেই মনের সুখে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে বাইরের হাঁকডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেল। কেউ একজন বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে খানিক বিরতি দিয়ে বারবার বলে যাচ্ছে ‘আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ’। ঘুম ভাঙানোর দায়ে আমার তো চরম মাত্রায় রাগ হওয়ার কথা; কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে না। আমি শুয়ে শুয়ে ভাবি, আজকালকার যুগে এমন পাগলাটে সাহসী প্রেমিক দেখা যায় না যে প্রেমিকার বাসার সামনে এসে সিনেমার নায়কদের মতো করে পুরো পাড়াকে জানিয়ে ‘আই লাভ ইউ’ বলবে। ছেলেটার ভালোবাসার জন্য এরকম একটু-আধটু ঘুম বিসর্জন দেয়াই যায়।

একটু পর খানিক বিরতিতে আবার কানে এলো ‘আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ’ শব্দ। পাশের ফ্ল্যাটে একটা সুন্দর মেয়ে থাকে। আমার সঙ্গে দু’দিন দেখা হয়েছিল। আমি সাধারণত সুন্দরীদের দিকে নজরুলের ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ’ গানের মতো করে তাকিয়ে থাকি না। কারণ সুন্দরী মানেই অন্য কারও গার্লফ্রেন্ড। সুন্দরী আর লোকাল বাস স্টেশন কখনও শূন্য পড়ে থাকে না। নিজেকে নিজে বলি, আগের সেই গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ আর গ্রাম ভরা সিঙ্গেল মেয়ের যুগ এখন নাই রে পাগলা। সেসব ইতিহাস গ্রাস করে নিয়েছে। তবুও একটা আফসোস লাগল, জীবনে কখনও কোনো মেয়ে আমাকে এভাবে ‘আই লাভ ইউ’ বলেনি, আর আমিও যে বলব সেরকম মেয়েও এখনও জুটেনি আমার কপালে। জুটলেও প্রেমিকার বাসার সামনে গিয়ে এভাবে সিনেমাটিক স্টাইলে ‘আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ’ বলার মতো সাহস আমার নেই।

‘আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ’ এর পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলছে। এ কেমন মেয়ে রে বাবা, ছেলেটা এতও করে বলছে তুই বেরিয়ে আয়। তুইও কাজলের মতো দৌড়ে গিয়ে তোর শাহরুখ খানকে জড়িয়ে ধর। সব যখন ফিল্মের কায়দায় হচ্ছে এটাও হোক। ভালোবাসায় ভরে উঠুক আমাদের পাড়া। তা না, ছেলেটাকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছে। মেয়েদের এ এক সমস্যা, এরা ইভটিজারকে ভাবে প্রেমিক আর প্রেমিককে ভাবে ইভটিজার। এবার সত্যি সত্যি অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে; কিন্তু ছেলেটা নাছোড়বান্দা প্রেমিক, সহজে দমবার পাত্র নয়। ভালোবাসা না নিয়ে শূন্য হাতে ফিরবে বলে মনে হচ্ছে না। প্রেমিক পিসটাকে এবার আমার দেখার খুব শখ হল। এ শীতকে উপেক্ষা করে ছেলেটা চলে আসছে আর আমি উঠে বেলকুনিতে যেতে পারব না তা কী হয়। বিছানা ছেড়ে বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম মহান প্রেমিক পুরুষটাকে দেখার জন্য। একি, এ দেখছি সবজিওয়ালা গলা ছেড়ে চিৎকার করছে আর বলছে, ‘অ্যাই ল্যাবু, অ্যাই ল্যাবু’।

©রাজীব নন্দী
প্রকাশিত: যুগান্তর || বিচ্ছু

ফেসবুক বলদ

একজন ইনবক্স করল, BFF লিখে কমেন্ট করুন। যদি লেখাটা সবুজ হয় তাহলে বুঝবেন আপনার আইডি নিরাপদ আর যদি না হয় তাহলে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলবেন।
: আমি রিপ্লাই দিলাম, আমার প্রোফাইল পিকচারের কোথাও কি বলদ লেখা আছে?
- না।
: আপনার কি তবে মনে হয়েছে আমি পাবনার হেমায়েতপুর থেকে পালিয়ে এসেছি?
- না।
: কোনো কারণে কি মনে হয়েছে প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়েছি, যা বলবেন সেটাই সান্ত্বনা হিসেবে মেনে নেবো?
- না।

তাহলে ইনবক্সে এইসব ভূয়া জিনিস পাঠাইলেন কেন?
আরে ভাই, সবাই পোস্ট দিচ্ছে তাই ভাবলাম আমিও জানাই।
বাঙালি যে কতোটা হুজুগে জাতি সেটা ফেসবুক না থাকলে দেখার সৌভাগ্য হতো না। এইসব হুজুগে বাঙালিরাই ভূয়া খবরের ভিত্তিতে এখানে সেখানে গিয়ে হামলা চালাতে বা কারো গলায় ছুরি বসাতে দুইবার ভাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবর্তনবাদ

√ ফার্স্ট ইয়ার
► এরা সিনিয়রদের কাছে নতুন মুরগি। যে কেউ যেকোনো সিনিয়রের বঁটির নিচে জবাই হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে।
► প্রথম কয়েক দিন স্বাধীন ক্যাম্পাসে নিজেদের পরাধীন হিসেবে আবিষ্কার করে এবং আইসিইউতে থাকা রোগীদের মতো সিনিয়র হওয়ার দিন গুনতে থাকে।
► এরা হলো সর্বজনীন সালামদাতা। সালাম দিতে দিতে প্রথম দিকে নিজের ক্লাসমেটদেরও সালাম দিয়ে ফেলে।
► ফার্স্ট ইয়ারের সব ছেলেকে না চিনলেও মেয়েদের সম্পর্কে অনেক খোঁজখবরই থাকে পরোপকারী সিনিয়র ভাইয়া সমাজের কাছে।
► এরা মনে মনে ভাবে সিজিপিএ ফোরে ফোর পাওয়া কোনো ব্যাপার না। একটু পড়াশোনা করলেই হবে।
► ফার্স্ট ইয়ারের কোনো ছেলেকে সিনিয়র ভাইয়ারা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট না পাঠালেও মেয়েদের নোটিফিকশনে সিনিয়র ভাইয়া সমাজের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের পাহাড় জমে থাকে।
► ফার্স্ট ইয়ারের মেয়েরা সিনিয়র ভাইয়া সমাজের প্রেমের প্রস্তাব পাওয়ার সৌভাগ্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। আর অনেক মেয়ে প্রত্যুত্তরে ‘আম্মু বকা দেবে’ প্রত্যাখ্যান কৌশল অবলম্বন করে থাকে।
► এরা ‘ক্লাস হবে না’ এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে দিশাহারা হয়ে নাচতে থাকে। অলিম্পিকে সোনা জিতেও উসাইন বোল্ট ও রকম নাচে নি।

√ সেকেন্ড ইয়ার
► সামনে এখনো তিন বছর আছে, একটু চেষ্টা করলেই সিজিপিএটা মেকআপ করতে পারব। কাল থেকেই পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করব—এসব ভাবতে ভাবতেই প্রতি রাতে এরা ঘুমাতে যায়।
► অনেক মেয়ে একা একা পার্কে যেতে কিংবা লাইব্রেরিতে যেতে ভয় পায় বলে বেশির ভাগ সময় সঙ্গে একজন নির্দিষ্ট সিনিয়র ভাইয়া কিংবা কখনো একজন ক্লাসমেট ছেলেকে তার পাশে দেখা যায়।
► এ বর্ষে মেয়েদের রুম মিনি কিচেনে পরিণত হয় এবং একা একা খেতে ইচ্ছা করে না বলে তার প্রেমিক নামক ক্ষুধার্ত প্রাণীর জন্য রান্না করে নিয়ে যায়।
► আম্মু বকা দেবে বলে যে মেয়ে ভাইয়া সমাজকে দূরে সরিয়ে রেখেছে এত দিন, সে চারপাশের পরিবেশ দেখে একনায়কন্ত্র থেকে সমাজতন্ত্রের ‘কেউ খাবে কেউ খাবে না তা হবে না তা হবে না’—স্লোগানে বিশ্বাসী হয়ে ওঠে। অতঃপর অনেক বড়শি থেকে যে বড়শিটা খুব কাছাকাছি লেগে থাকে, সেটা গিলে ফেলে।
► ‘ক্লাস হবে না’—এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে এরা প্রেমিক কিংবা প্রেমিকাকে ফোন দিয়ে ক্যাম্পাসের লাভ চত্বরে বসে একসঙ্গে ভবিষ্যৎ মার্কিন রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করে।

√ থার্ড ইয়ার
► রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এদের সম্পর্কে বলা যায়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের থার্ড ইয়ারের মতো এমন বালাই আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই। ’ সিনিয়র সিনিয়র ভাব; কিন্তু একটা বছরের অভাব।
► ধ্যাত, ক্যারিয়ারের জন্য সিজিপিএ কোনো ব্যাপার না—এটা ভেবে, তারপর কম সিজিপিএধারী বিখ্যাত ব্যক্তিদের স্মরণ করে ঘুমাতে যায়।
► বাসা থেকে ফোন করলে এদের প্রায় সময়ই উত্তর হয়, ‘এই তো আর একটা বছর। ’
► এ বয়সে এসে অনেকে অসহায় হয়ে নিজ প্রেমিকাকে দানবীর মুহসীনের মতো অন্যের হাতে তুলে দিয়ে মহানুভবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
► এরা ক্লাস হবে না—এমন খবরে খুব একটা উল্লাস প্রকাশ করে না। এদের ভাব প্রকাশ হয় এমন ‘ওহ, তাহলে ক্লাস হবে না। ’

√ ফোর্থ ইয়ার
► মোস্ট সিনিয়র ব্যাচ বলে এরা ক্যাম্পাসের সবার ভাই, মানে জাতীয় ভাই। তাই এদের বলা হয় ‘ভাই ব্যাচ’।
► এদের মাথায় একাডেমিক পড়াশোনার চেয়ে ক্যারিয়ার চিন্তা বেশি থাকে।
► এদের ডায়ালগ হলো, ‘সিজিপিএ খাব না ফ্রিজে রেখে দেব। ’ কোনো রকম পাস করে যেতে পারলেই বাঁচি।
► এদের কারো কারো গার্ল ফ্রেন্ডের বিয়ে হয়ে যায়, তবে অন্য কারো সঙ্গে। রাস্তার বাস আটকে দেওয়ার ক্ষমতা থাকলেও চাল-চুলাহীন বলে বিয়ে আটকানোর সামর্থ্য প্রায় সময়ই এদের থাকে না।
► ক্লাস হবে না—এমন খবরে এরা খুব কষ্ট পায়। কোর্স যত তাড়াতাড়ি শেষ করতে পারে, ততই যেন মঙ্গল।

প্রকাশিত: কালের কন্ঠ || ঘোড়ার ডিম
২০-০৩-২০১৮

তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে মুক্ত করে দাও

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনেকগুলো প্রেমিকা ছিল। তাইতো তিনি দর্শন ঝেড়েছেন, "তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে মুক্ত করে দাও, সে যদি ফিরে আসে তবে সে তোমার আর যদি না আসে সে কখনোই তোমার ছিল না।" তিনি জানতেন সবগুলো প্রেমিকাকে মুক্ত করে দিলে কেউ না কেউ ফিরে আসবেই। কখনোই সিঙ্গেল থাকতে হবে না।
কিন্তু হে বালিকা, আমি রবীন্দ্রনাথের মতো মুক্ত প্রেমিক নই। আমি স্বৈরাচারী প্রেমিক। আমার তুমি একজনই। আমি সকালের এক কাপ চায়ে তোমাকে চাই, দুপুরের লাঞ্চের টেবিলে তোমাকে চাই, রাতে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারেও তোমাকে চাই।

কোটা সংস্কার চাই

ফ্রেন্ডলিস্টের এক আগুন সুন্দরী ফটো আপলোড দিছে। সেখানে শিলাবৃষ্টির মতো কমেন্টের উপর কমেন্ট পড়তেছে; নাইস, হেভি লাগতেছে, জোস, লুক লাইক এ ডল, গর্জিয়াস, অনেক সুন্দর হইছে আপু অ্যাড মি আই অ্যাম ব্লক, কেউ গোলাপ ফুলের ফটো কমেন্ট দিচ্ছে।
তয় এতো কমেন্টের ভিড়ে আমি আবার কমেন্ট করি না। কিন্তু যেহেতু জলন্ত আগুন সুন্দরী তাই একটা কমেন্ট না করলে নিজেকে ছেলে ছেলে লাগে না ঠিক। কী থেকে কী ভেবে হঠাৎ করে কমেন্ট করে দিলাম- 'কোটা সংস্কার চাই।' কারণ মাথায় কেবল কোটা সংস্কার টপিক্সটাই ঘুরতেছে ইদানিং।
ানিক বাদেই রিপ্লে আসলো, এই কমেন্টের মানে কী?
আসলেই তো, এই কমেন্টের মানে কী। ভদ্রলোকের এক কথা। যা বলছি এটার যুতসই ব্যাখ্যা তো দিতেই হবে, সরি ভুলে কমেন্ট পড়েছে এসব বললে আমার রঙিন ইমেজ সাদাকালো হয়ে যাবে।
রম্য পত্রিকায় এতো এতো আইডিয়া প্রসব করলাম আর এইটার উত্তর যদি না দিতে পারি তো পুরো মানসম্মান প্লাস্টিক হয়ে যাবে।
.....ইউরেকা। ইউরেকা। আইডিয়া।
তারপর রিপ্লাইতে লিখে দিলাম,
"আসলে আমার কোনো কোটা নাই। কোটা বৈষম্য না থাকলে হয়তো এতোদিন একটা বিয়ে করার মতো চাকরি জুটে যেতো। হয়তো আপনার মতো সুন্দরী একটা বউও থাকতো। আপনার মতো আগুন সুন্দরীদের বিয়ে করার জন্য প্রথমে কোটা সংস্কার করা জরুরি। তাই আগে কোটা সংস্কার চাই।"
মেয়ে থাম্ব দিয়ে ধপাস করে কমেন্টে হা হা রিএক্ট বসিয়ে দিল। বুঝেছি, আগুনে এডলিবিটাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড ঢেলে দিয়েছি। যাক, এবেলায় হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।

মশাকে যে কারণে ভালোবাসি

► মশা একটি গৃহপালিত পাখি। এরা খাঁচা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে মনুষ্যজাতির সঙ্গে গৃহে বসবাস করে আসছে। এরা অন্য পাখির মতো বেঈমান নয় যে সুযোগ পেলেই উড়ে চলে যাবে।
► মশা হলো প্রকৃতির সংগীতশিল্পী। কোনো চার্জ ও টিকিট ছাড়া সে অনবরত আমাদের গান শুনিয়ে বিনোদন দিয়ে থাকে।
► যখন রাগ হয়, তখন থাপড়িয়ে কয়েকটা মশা মেরে রাগ প্রশমন করতে পারি। কোনো মশাধিকার কমিশন বা মশা রক্ষা কমিশন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আসে না।
► মশা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এক হাতে তালি বাজে না, সে জন্য দুই হাতই দরকার।
► মশা আছে বলেই আমাদের সিটি করপোরেশনের মশা মারা কমিটি পরিবারসহ খেয়েদেয়ে বেঁচে আছে।
► মশা আছে বলেই শ্রমিকরা মশার কয়েল, মশারি, স্প্রে বানিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রাখে।
► মশা আছে বলেই আমরা বুঝি, আমাদের চারপাশ নোংরা হয়ে আছে, পরিষ্কার করতে হবে।
► পরিশেষে কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়—‘মানুষ আর মশা বাহিরে কেবল, ভেতরে সবার সমান রাঙা। ’
প্রকাশিত: কালের কন্ঠ | ঘোড়ার ডিম
০৩-০২-২০১৮

একটি টিউশনির গল্প

স্টুডেন্টদের আম্মু বললো, স্যার পড়াশোনা রাইখা আপনার দুই আদরের ছাত্র সারাদিন ফেসবুক চালায়। এইরকম হইলে পাশ করবো কেমনে কন তো।
এই নালিশ পুরনো। দুইটাকেই ফ্রেন্ডলিস্টে জায়গা দিছিলাম বহু আগে। তারপর পড়াইতে গেলেই রোজ জিজ্ঞেস করতো, স্যার এতো স্ট্যাটাস কই পান, আপনার লিস্টের আপুগুলো সুন্দর। লাভ রিএক্ট দেয়া অমুক আপুটা বোধহয় আপনাকে ভালোবাসে স্যার। এইসব পাঁচালী শুনতে শুনতে ধৈর্যসীমা অতিক্রম করার পর দুইটারে ব্লক দিয়ে পরদিন কইলাম, আমার আইডি কাউয়ায় খেয়ে ফেলছে।
নাহ্। অবস্থা তো খারাপ। কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। মনে মনে ভাবলাম, স্টুডেন্টকে কি বলবো, স্যারইতো সারাদিন ফেসবুক গুতায়।
আজ তৃতীয় দিনের মতো অনুপাতের অংক করাবো। জগাই মাধাই দুই ভাইকেই জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের মধ্যে কার ফেসবুক লাইক কমেন্ট বেশি হয়? দুজনই চুপ। শয়তানের হাড্ডি দুইটাই। বলল, স্যার আমাদের ফেসবুক আইডিও কাউয়ায় খেয়ে ফেলছে আপনারটার মতো। এখন তো ফেসবুকিং করি না। আহ্, কি ইনোসেন্ট!
শয়তানকে বিশ্বাস করলেও এই দুইটাকে বিশ্বাস করা কষ্টকর।
আচ্ছা, তার আগে এইটার উত্তর দাও, টাইম পাঁচ সেকেন্ড। লাভ রিএক্ট আর হাহা রিএক্টের অনুপাত যদি ১ঃ৭ হয়, তবে গতকাল আমার পোস্টে লাভ রিএক্টের সংখ্যা ৩ টি হলে হাহা রিএক্টের সংখ্যা কত ছিল?
একটা বলে উঠলো, স্যার ১০৬ টা।
কীভাবে? বুঝিয়ে দাও...
স্যার বুঝানোর কিছু নাই। আমরা ফেক আইডি থেকে প্রতিদিন আপনার পোস্ট পড়ি। আর গতকালের পোস্টে ১০৬ টা হা হা রিএক্ট ছিল।
স্যার অজ্ঞান!

সত্যিকারের ভালোবাসা কী

সত্যিকারের ভালোবাসা ফিল্টারের মতো যা মানুষকে বিশুদ্ধ করে দেয়।
সত্যিকারের ভালোবাসা অগ্নিশিখার মতো যা মানুষকে পুড়িয়ে খাঁটি করে দেয়।
সত্যিকারের ভালোবাসা আকাশের মতো যা মানুষের মনকে বিশাল করে দেয়।
সত্যিকারের ভালোবাসা শিশিরবিন্দুর মতো যেখানে ক্ষুদ্র কিছুতেই অপার সৌন্দর্য খুঁজে পায়।
সত্যিকারের ভালোবাসা গভীর নদীতে ভেসে বেড়ানো ডিঙি নৌকার মতো যা কোনো কিছুকে পরোয়া না করে নিজের মতো ভাসতে থাকে।

ধর্ষণ এড়িয়ে চলার তরিকা

রাতে একা বের হয়ো না
পুরুষেরা তাতে উদ্দীপ্ত হন।
কখনোই একা বের হয়ো না
কিছু পুরুষ যেকোন পরিস্থিতিতেই উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন।

ঘরে থেকো না
মেহমান এবং আত্মীয় যে কেউই ধর্ষণ করতে পারেন।
পোশাক ছাড়া চলাফেরা কোরো না
পুরুষেরা এতে উদ্দীপ্ত হন।
পোশাক পরেও কোথাও যেও না
যেকোন পোশাকই কিছু পুরুষকে উদ্দীপ্ত করে।
বাল্যকাল এড়িয়ে চলো
কিছু ধর্ষণকারী আগ্রহী হন বালিকাদের প্রতি।
বৃদ্ধকাল এড়িয়ে চলো
কিছু ধর্ষণকারীর পছন্দ বয়স্ক মহিলা।
বাবা, দাদা,
চাচা এবং ভ্রাতা - না থাকাই ভালো
এরাও ধর্ষণ করে থাকেন।
বিয়ে কোরো না
বিয়ের সম্পর্কে ধর্ষণ জায়েজ।
সত্যি কথা বলতে কী-
সবচেয়ে ভালো হয় যদি
তুমি নিজেই 'নাই' হয়ে যাও।
অনুবাদ: London Rape Crisis Center থেকে।

আসিফা

ASIFA ❤️
অসাধারণ লেখা, তাই শেয়ার করলাম!
বেশ্যা......
বিছানাতেই হড়হড় করে বমি করে ফেললো গনেশ। চোলাই'টা আজ বেশি টানা হয়ে গেছে।সাথের ফুলুরি'টাও শালা ঠান্ডা ছিলো, অম্বল হয়ে গেছে নির্ঘাৎ!
---"শালা ঢ্যামনা, দিলি তো শালা বিছানা ভাসিয়ে? সকাল থেকে গিলে বসে আছিস নাকি বে? চুল্লুখোর শালা! সন্ধ্যে সন্ধ্যে দিলো শালা সব একশা করে! ধুপ দিলাম এই সবে, দিলো হারামী'টা বারোটা বাজিয়ে...." ---বকবক করেই চলেছে বিজলী!
গনেশ জানে, এখন কিছু বলতে গেলেই আরও খিস্তি খাবে। তাই কাচুমাচু হয়ে চুপ করে রইলো।
---"আবে এই শালা, শুয়োরের বাচ্চা, বসে আছিস যে? ওঠ! নাম খাট থেকে! তোর বাপ এসে সব পরিস্কার করে দেবে নাকি রে গান্ডু...."
তড়িঘড়ি খাট থেকে নেমে এলো গনেশ। বাথরুমে যেতে হবে একবার, বলতে সাহস হলোনা। চুপচাপ নিজেই চলে গেল! ভালো করে মুখ হাত ধুতে ধুতে ভাবলো, কিছু টাকা এক্সট্রা দিয়ে দেবো বিজলী'কে। আজ টোটো চালিয়ে নেহাত মন্দ রোজগার হয়নি।
---"এই শালা, আর বমি করলে কেলিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবো!"
---"না না আর হবেনা!"
বিজলী এইটুকু সময়ের মধ্যেই সুন্দর করে চাদর পাল্টে, সব ধুয়ে, বেশ ক'টা ধুপ জ্বালিয়ে দিয়েছে।
আধঘন্টা পর....
---"নে নে... এবার ফোট! অন্য খদ্দের আসবে!"
গনেশ পকেট থেকে পাঁচটা একশো টাকার নোট বের করলো।
---"এই নে।"
---"পাঁচটা কেন বে? আজ কি এমন মধু পেলি বাবা, যে একশো বেশি?"
---"ওসব না। তোর ঘর নোংরা করলাম। আর আজ রোজগার ভালোই হয়েছে রে। এক বিয়েবাড়ির ভাড়া ছিল....."
---"আজ কিছুই লাগবেনা। ফিরি।"
---"ফ্রি? সে কিরে!"
---"হ্যাঁ, ফিরি। কানের মাথা খেয়েছিস নাকি?"
---"কিন্তু কেন? এরকম তো কোনোদিন....."
---"আজ, কাল, দু'দিন ফিরি করে দিয়েছি আমরা। এই পুরো মহল্লা। ওই যে, রেপ হয়েছে না কোথায়, তাই।"
অবাক হয়ে গেলো গনেশ!
---"তার জন্য তোরা ফ্রি কেন করলি? প্রতিবাদ? এরপর কি মোমবাতি নিয়েও নামবি নাকি? ভুখ হড়তাল করবি?"
---"না। ওসব শালা পতিবাদ টতিবাদ না। এতো ক্ষিদে নিয়ে ঘুরছিস তো তোরা... আট বছরের বাচ্ছাটাও সুড়সুড়ি দিলো তোদের... এতই কামড় তোদের। তাই আর কি। এই দু'দিন তোদের মতো ব্যাটাছেলেদের জন্য আমরা ফিরি। কত ক্ষিদে তোদের, মিটিয়ে যা মাগনায়।বাচ্ছাগুলোকে ছাড়ান দে, এই দুদিন না হয়....."
কথা নেই গনেশের মুখে! ব্যাটাছেলে হয়ে জন্মে এই প্রথম লজ্জা করছে তার!
বিজলী নির্বিকার....
---"নে নে। অনেক ভড়ং হলো। ফোট এবার। পরের মালকে আসতে দে......"
বেশ্যাপট্টি থেকে বেড়িয়ে গনেশের মনে হলো, এরকম ভাবে সবাই যদি ভাবতে পারতো! ওই বেশ্যাগুলোর জন্য একজনও যদি রেহাই পায়.....!!! কপালে দু'হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করলো গনেশ। কার উদ্দেশ্যে? নিজেই জানেনা!!!


(সংগ্রহীত)

হুম নিতে পারো

- এই শাড়িটায় আমাকে ভালো লাগবে?
- হুম, নিতে পারো।
- কিন্তু এর এমব্রয়ডারিতে আরেকটু কাজ করা হলে ভালো হত।
- তাহলে থাক।
- তবে কালারটা বেশ মানাবে আমাকে, তাই না?
- হুম, নিতে পারো।
- দিনের বেলা এতোটা কালারফুল লাগবে বলে মনে হয় না।
- তাহলে থাক।
- তবে পাশের বাসার ভাবীরটার চেয়েও এটা জোস।
- হুম, নিতে পারো।
- তবে সুতোটা বেশি সুবিধার মনে হচ্ছে না।
- তাহলে থাক।
- এই দেখো বর্ডারের কাজটা দারুণ কিন্তু।
- হুম, নিতে পারো।
- কয়েকদিন পরার পর রং ফ্যাকাসে হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
- তাহলে থাক।
- ধুর ছাতার মাথা, কয়দিন আর পরবো। কাপড়ইতো।
- হুম, নিতে পারো।
- দাম বোধহয় বেশিই হবে একটু।
- তাহলে থাক।
- (দাম জিজ্ঞস করার পর) দামও তো বেশি না, ভালোই হয়। নিবো?
- হুম, নিতে পারো।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেচারা স্বামী এখনো বকে যাচ্ছে-
তাহলে থাক, হুম নিতে পারো তাহলে থাক, হুম নিতে পারো.....

প্রেমিকার নাম বৃষ্টি

বন্ধুকে ইনবক্স করে বললাম, তোর প্রেমিকাকে একটু কন্ট্রোলে রাখতে পারিস না। সবসময় এতো বিরক্ত করে কেন। আমার ধৈর্যের লাইন অব কন্ট্রোল ভেঙ্গে ফেলতেছে।
ও আগে প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়ে পরে জিজ্ঞেস করলো, কীসব আবোল তাবোল কচ্ছিস।
লিখলাম, তো আর কচ্ছি কী। এমন বেহায়া হয় কারো প্রেমিকা!
ও কইলো, ব্যাডা খুইলা ক। মেজাজ টেজাজ খারাপ হইতাছে।
কইলাম, এইটাই তো। মেজাজ খারাপ হইবো তোদের, ঝগড়া করবি তোরা আর তোর প্রেমিকা কাইন্দা সবাইকে ভিজাইয়া দিবো এইটা কেমন কথা।
রিপ্লাই আসলো, তুই জীবনেও ভালো হইবি না। আমার গার্লফ্রেন্ডের নাম বৃষ্টি হইলে সেখানে আমার কী করার আছে। ওর জন্মের সময় তো আর আমারে জিগাইয়া নামকরণ করে নাই হারামি। যা ভাগ।

বিড়াল গল্পের প্রতিক্রিয়া

....প্রাতঃকালে পেটানন্দের লাগিয়া মুড়ি চানাচুর মাখিয়া লইলাম। অর্ধেক ভিতরে চালান করিবার পর বুকসেল্ফ নাড়িতে চাড়িতে বঙ্কিমচন্দ্রের বিখ্যাত 'বিড়াল' গল্প সামনে আসিয়া হাজির হইলো।
বিড়াল গল্পে মুখ ডুবাইয়া পড়িতে পড়িতে হঠাৎ খেয়াল করিলাম সাদা-কালো বিড়ালটা আমার মুড়ির বাটিতে মুখ ডুবাইবার চেষ্টা করিতেছে। আমি চোখ ফিরাইয়া কিছু বলিতে উদ্যত হইবো এমন সময় এন্টেনায় খেলিয়া গেল, এই খাবারে আমার যতটুকু অধিকার রহিয়াছে ঐ বিড়ালটারও ততটুকু অধিকার রহিয়াছে। আমি মোটা গতরের মনুষ্য বলিয়া ওর অধিকার অস্বীকার করাটা বড়ই অনুচিত কার্য হইবে।
ঠোঁটে ঠোঁট চাপিয়া কোনো রকম ভেংচি না কাটিয়া নীরবে ঐ মুড়ির অধিকার ছাড়িয়া বঙ্কিমে মন দিলাম। আর মনে মনে বলিলাম, খা বিড়াল খা। অন্তত তোকে না খাইতে দিলে বঙ্কিমচন্দ্রের এই বিড়াল গল্প লেখাটাই যে সময় নষ্ট বলিয়া ইতিহাস সাক্ষী হইয়া থাকিবে।
খানিক বাদেই মুখ তুলিলাম। বিড়াল আমার পানে তাকাইয়া মুখ ভেংচি কাটিয়া এক পিস মুড়িও না খাইয়া বলিয়া উঠিল, আমি তোর মতো দুর্ভিক্ষ পীড়িত নহে যে মুড়ি খাইবো, হু।
পৃথিবী বড়ই নিষ্ঠুর। সে পৃথিবীর মানব হিসেবে আমার ভাগ্য আরো নিষ্ঠুরতা সহ্য করিয়া যাইতেছে। ইহা নতুন কিছু নহে। যাহাকেই প্রাণ খুলিয়া ভালোবাসা বিলাইয়া দিয়াছি সে-ই আমার ভালোবাসাকে অবজ্ঞা করিয়া চলিয়া গিয়াছে।

সিজিপিএ

- হ্যালো, কি? 4.83? ওর ভাত বন্ধ দুপুর থেকে। ওরে বলে দেও যেন যেদিকে মন চায় বের হয়ে যায়। আমি আসতেছি..... অপদার্থ যত্তসব।

বলেই মাথা চুলকাতে চুলকাতে বসের রুমে গেলেন লিখন সাহেব।
স্যার, আপনাকে সেদিন বলেছিলাম না যে আজ আমার আর্জেন্ট যেতে হতে পারে এক জায়গায়। আমার এখনি যেতে হবে।
আচ্ছা আচ্ছা। ঠিকাছে যান।

অফিস থেকে বের হয়ে একটা দোকানে ঢুকলেন । বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ই ভেবে রেখেছিলেন এ দোকানে ঢুকবেন। তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে বাড়ির বাস ধরলেন।

ক্রিং ক্রিং......

দরজায় খুলতেই উচ্চস্বরে চেঁচামেচি। কই গাধাটা কই? ওকে ভাত দিয়েছ দুপুরে? বের হয় নাই এখনো?

কি হইছে? কোনদিন তো ছেলের পড়াশোনার ব্যাপারে নাক গলাতে শুনি নি। আজ এত হট কেন! আস্তে আস্তে বলতে লাগলেন মিসেস লিখন।

কি হইছে মানে! তুমি জানো না কি করছে ও। এখানে নিয়ে আসো তোমার গুনধর ছেলেকে। ওর গালটা আমার হাতের কাছে এনে দাও। অফিস থেকে চলে আসছি কি এমনি এমনি!

ছেলেকে সামনে এনে দাঁড় করালেন। মাথা নিচু হয়ে হাঁটু কাপা অবস্থা তার। জিপিএ ফাইভ পায় নি বলে তার বাবা এমন করবে ভাবতেও পারে নি সে। পড়াশোনা তো কম করে নি, তার কি দোষ!

কি খবর নেতা আপনার? মাথা নিচু কেন? মাথা উঁচু করেন।

মাথা তুলতেই ব্যাগ থেকে বের করে দিলেন সদ্য কেনা গিফটগুলো।
মুহূর্তেই থ হয়ে গেলেন মা ও ছেলে। কিছুই বুঝতে পারলেন না কি হল।
ছেলেকে বুকে টেনে নিলেন লিখন সাহেব। বাচ্চা তুই মাথা উঁচু করে থাকবি। অনেক ভালো রেজাল্ট করেছিস। আর বাবাকে কেউ ভয় পায় বোকা! আমি তো তোর বন্ধুর মতই। আসো আমরা একসাথে খাবো বলে তোমাকে খেতে দিতে না করেছি। ঐ তুমি কেমন মা, ছেলেটাকে একটু আদর করো না পাশ করার পরও।

তুমি যে কি আমি আজও চিনতে পারলাম না গো। গলায় বিস্ময় মেখে বললেন মিসেস।

হে হে এই লিখনকে চেনা এত সহজ না।